দেশজুড়ে

রোয়ানু মোকাবেলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি সম্পন্ন

ক্রমেই উপকূলের দিকে সরে আসছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’। এর প্রভাবে কক্সবাজারে ৬নং বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় চলমান ও পরবর্তী সময়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি সভা করেছে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারি আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১২টায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজারে থেকে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমে শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলের দিকে সরে আসায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সকল মাছধরা ট্রলার ও সব ধরনের নৌ-যানকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে চলাচল করতে বলা হয়েছে। জেলা তথ্য অফিস শহরে মাইকিং করে এই সতর্কবার্তা প্রচার করছে।সভায় বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক, সিভিল সার্জন ডা. পুঁচনো, দমকল বাহিনী কর্মকর্তা আবদুল মজিদ, রেড ক্রিসেন্ট সহ-সভাপতি নুরুল আবছার, কক্সবাজার পৌরসভা মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, জেলা মানবাধিকার কমিশন সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকাসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।সভায় জানানো হয়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। বঙ্গোপোসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট এ নিম্নচাপ কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকলেও কক্সবাজার জেলায় জারি করা হয়েছে সতর্কবার্তা। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় রেডক্রিসেন্ট কর্মী, মেডিকেল টিম, প্রায় ৪ হাজার উদ্ধারকর্মী নিয়োজিত রাখা হয়েছে।জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় দুর্গত মানুষের নিরাপদ অবস্থানের জন্য জেলার ৫১৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য ১৬২ মেট্রিক টন শুকনো খাবার ও নগদ ২ লাখ ২৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. পু চ নু জানান, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালেও দুর্গত মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা । উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম-নোয়াখালী অঞ্চলের ওপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলে গুমোট মেঘলা আবহাওয়া ও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।জেএইচ