ধর্ম

তাওয়াফের সময় কথা বলার ব্যাপারে যা বলেছেন নবিজি (সা.)

তাওয়াফ শব্দের অর্থ ঘোরা বা প্রদক্ষিণ করা। পরিভাষায় তাওয়াফের নিয়ত করে পবিত্র কাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদের কোনা থেকে শুরু করে চারপাশে সাত বার ঘোরাকে তাওয়াফ বলা হয়। আল্লাহ তাআলা তার সম্মানিত ঘর কাবা তাওয়াফকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত বানিয়েছেন। কাবা ছাড়া অন্য কোনো মসজিদ বা স্থাপনার চারদিকে তাওয়াফ করার অনুমতি দেননি। পবিত্র কোরআনে কাবা তাওয়াফের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা যেন প্রাচীন ঘর (কাবা) তাওয়াফ করে। (সুরা হজ: ২৯)

আল্লাহ তাআলা তার নবি ও খলিল ইবরাহিম (আ.) ও তার ছেলে ইসমাইলকে (আ.) নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তারা কাবা ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও নামাজ আদায়কারীদের জন্য পবিত্র রাখে। তিনি বলেন, আর আমরা ইবরাহিম ও ইসমাইলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম, তোমরা আমার ঘরকে পবিত্র রাখো তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য। (সুরা বাকারা: ১২৫)

তাওয়াফ হজ ও ওমরাহর অপরিহার্য আমল। ওমরাহর সময় পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করা ফরজ। হজের সময় তাওয়াফে জিয়ারত করা ফরজ। আরাফায় অবস্থানের পর এ তাওয়াফ করতে হয়।

নবিজি (সা.) তাওয়াফকে নামাজের সাথে তুলনা করেছেন। তাওয়াফের সময় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন। যদিও নামাজের মতো তাওয়াফের সময় কথা বলা নিষিদ্ধ নয়। কথা বললে তাওয়াফ নষ্ট হয়ে যায় না। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, বাইতুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা নামাজ আদায় করার মতই। তবে নামাজে আপনারা কথা বলতে পারেন না, কিন্তু তাওয়াফের সময় কথা বলতে পারেন। তাই তাওয়াফের সময় সময় কথা বললে শুধু ভাল কথাই বলুন। (সুনানে তিরমিজি: ৯৬০)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, কাবা ঘরের তাওয়াফ নামাজ, তবে আল্লাহ এতে কথা বলাকে হালাল করেছেন। যে তাওয়াফের সময় কথা বলবে, সে যেন শুধু কল্যাণকর কথাই বলে। (মুসতাদরাকে হাকেম, সহিহুল জামে: ৩৯৫৪)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, তাওয়াফ নামাজের মতো, তাই আপনার তাওয়াফের সময় কথা কম বলুন। (তাবরানি ফিল কাবির, সহিহুল জামে: ৩৯৫৬)

তাওয়াফের সময় অজু অবস্থায় থাকা ওয়াজিব। অজু ছাড়া তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, যখন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাওয়াফ করতে চাইতেন তখন তিনি ওজু করে নিতেন। (সহিহ মুসলিম: ১২৯৭)

তাওয়াফের তিন চক্কর বা এর কম আদায়ের পর কারো যদি অজু ভেঙে যায়, তাহলে অজু করে এসে পুনরায় শুরু থেকে সাত চক্কর পূর্ণ করা মুস্তাহাব। তবে অজু করে আসার পর অবশিষ্ট চক্করগুলো করে নিলেও তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে।

আর তাওয়াফের চার চক্কর বা এর বেশি আদায়ের পর অজু ভেঙে গেলে উত্তম হলো অজু করে এসে পুনরায় প্রথম থেকে চক্কর শুরু না করে শুধু অবশিষ্ট চক্করগুলো আদায় করা। তবে এ ক্ষেত্রেও কেউ যদি পুনরায় প্রথম থেকে সাত চক্করই পূর্ণ করে তাহলে সেটিও শুদ্ধ হবে।

তাওয়াফের সময় পবিত্র পোশাকে থাকা সুন্নত। নাপাক কাপড়ে তাওয়াফ করা মাকরুহ। তাই পবিত্র পোশাকেই তাওয়াফ করা উচিত। তবে পবিত্র পোশাকে তাওয়াফ করা যেহেতু ফরজ-ওয়াজিব নয়, তাই কোনো দুর্ঘটনার কারণে তাওয়াফের মাঝে যদি কারো পোশাক অপবিত্র হয়ে যায় যেমন অনেকে ছোট শিশুকে নিয়ে হজ-ওমরায় যান, তাওয়াফের সময় তাকে কোলে রাখেন, এ সময় শিশু যদি প্রশ্রাব করে দেয়, ইহরামের কাপড় অপবিত্র হয়ে যায় এবং তাওয়াফকারী ওই অবস্থায়ই তাওয়াফ শেষ করে, তাহলে তার তাওয়াফ হয়ে যাবে। এ কারণে কোনো সদকা বা জরিমানা ওয়াজিব হবে না।

ওএফএফ/জিকেএস