ধর্ম

যেভাবে তৈরি হয়েছিল নবিজির (সা.) মিম্বর

জুমার খুতবা মিম্বরে দাঁড়িয়ে দেওয়া সুন্নত। নবিজি (সা.) মদিনায় হিজরতের পর যখন জুমার বিধান নাজিল হয় এবং নিয়মিত জুমা আদায় করা শুরু হয়, তখন নবিজি (সা.) নিজেই মসজিদে নববিতে জুমার খুতবা দেওয়ার জন্য একটি মিম্বর তৈরি করার উদ্যোগ নেন। মিম্বর তৈরি হওয়ার পর সব সময়ই তিনি মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিয়েছেন। তার পরে সাহাবিদের মধ্যে যারা ‍জুমা পড়াতেন, তারাও মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিয়েছেন। 

নবিজির (সা.) মিম্বর তৈরি করা প্রসঙ্গে আবু হাজেম (রহ.) একবার কিছু লোক সাহাবি সাহল ইবনে সাদের (রা.) কাছে এলো এবং তারা রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বর কাঠের তৈরি ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক করতে লাগল। সাহল ইবনে সাদ (রা.) বললেন, নবিজির (সা.) মিম্বর কাঠের তৈরি ছিল কি না এবং কে তৈরি করেছিলেন তা আমি জানি এবং সর্বপ্রথম কোন দিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ওপর আরোহণ করেছিলেন, তাও আমি দেখেছি।

আবু হাজিম (রহ.) বলেন, আমি সাহলকে (রা.) বললাম, হে আব্বাসের পিতা! আপনি ওইসব ঘটনা পুনরায় আমাদেরকে বলুন। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বর তৈরির জন্য এক আনসারি নারী সাহাবিকে বলে পাঠালেন যে, আপনি আপনার কাঠমিস্ত্রি গোলামটি একটু অবসর দেবেন যেন সে আমার জন্য একটি মিম্বর তৈরি করে দিতে পারে। আমি ওই মিম্বরে বসে মানুষকে ওয়াজ নসিহত করব। তারপর ওিই গোলামটি তিন সিঁড়িবিশিষ্ট একটি মিম্বর বানায় এবং রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশে সেটি মসজিদের এই স্থানে (বর্তমান স্থানে) রাখা হয়। মিম্বরটি তৈরি হয়েছিল গাবা (মদিনার নয় মাইল দূরে অবস্থিত মালভূমির নাম) অঞ্চলের ঝাউগাছের কাঠ দিয়ে।

একদিন নামাজের সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বরটির ওপর দাঁড়ালেন এবং নামাজের তাকবির বললেন, লোকেরাও তার পিছনে তাকবির বলল। তিনি মিম্বরের ওপরেই ছিলেন, তারপর তিনি রুকু থেকে উঠে দুই/এক কদম পেছনের দিকে হেঁটে নিচে নেমে গেলেন। আর মিম্বরের গোঁড়ায় সিজদা করলেন। তারপর আবার তিনি আগের জায়গায় চলে গেলেন। এভাবে তিনি তার নামাজ শেষ করলেন। নামাজ শেষে তিনি সবার দিকে ফিরে বললেন, মিম্বরে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছি যেন আপনারা আমার অনুকরণ করতে পারেন এবং আমার নামাজ শিখে নিতে পারেন। (সহিহ মুসলিম: ১০৯৯)

মসজিদে নববীর বর্তমান মেহরাব ও মিম্বর

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আনসারী নারী সাহাবি নিজেই নবিজির (সা.) কাছে এসে বলেছিলেন, তিনি নবিজির (সা.) জন্য কাঠের কিছু তৈরি করে দিতে চান। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, এক নারী নবিজির (সা.) কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি আপনার বসার জন্য কিছু তৈরি করে দেব? আমার একজন কাঠমিস্ত্রী গোলাম আছে। নবিজি (সা.) বললেন, ঠিক আছে, যদি আপনার ইচ্ছা হয় তাহলে তৈরি করিয়ে দিতে পারেন। তারপর ওই নারী সাহাবি একটি মিম্বর তৈরী করিয়ে দিলেন।  (সহিহ বুখারি: ৩০৫)

এই দুটি বর্ণনা সমন্বয় করে বোঝা যায়, প্রথম ওই আনসারী নারী সাহাবি নিজেই নবিজির (সা.) কাছে এসে বলেছিলেন, তার একজন কাঠমিস্ত্রি দাস আছে, তিনি নবিজিকে (সা.) কাঠের কিছু তৈরি করে দিতে চান। পরে নবিজি (সা.) তাকে মিম্বর তৈরি করিয়ে দিতে বলেছিলেন। 

প্রতীকী ছবি

নবিজির জন্য খেজুর গাছের কান্না

মিম্বর তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত নবিজি (সা.) একটি খেজুর গাছের কাণ্ডে ভর করে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। মিম্বর তৈরি হওয়ার পর নবিজি (সা.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়া শুরু করলে ওই খেজুর গাছের কাণ্ডটিকে কাঁদতে শোনা যায়। তখন নবিজি (সা.) কাণ্ডটিকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করেন। এটি ছিল নবিজির (সা.) একটি মুজিজা।

জাবের (রা.) বলেন, একটি খেজুর গাছের কাণ্ড বা খুঁটি ছিল মিম্বর তৈরি হওয়ার আগে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুতবা দেওয়ার সময় তাতে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। তারপর যখন কাঠের মিম্বর তৈরি করে রাখা হল এবং নবিজি (সা.) খুতবা দিতে মিম্বরে দাঁড়ালেন, তখন আমরা ওই কাণ্ডটি থেকে দশ মাসের অন্তঃসত্ত্বা উষ্ট্রীর কান্নার মতো শব্দ শুনতে পেলাম। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বর থেকে নেমে নিজের হাত ওই কাণ্ডটির ওপর রাখলে সেটি শান্ত হলো।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, জুমার দিন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মিম্বরের ওপর বসলেন, তখন খেজুরের যে কাণ্ডটির পাশে তিনি খুতবা দিতেন, তা এমন চিৎকার করে কেঁদে উঠল যেন তা ফেটে পড়বে। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বর থেকে নেমে কাণ্ডটিকে জড়িয়ে ধরলেন। তখন কাণ্ডটি আদর করে চুপ করানো হচ্ছে এমন শিশুর মতো কাঁদতে লাগলো। তারপর এক পর্যায়ে কাণ্ডটি শান্ত হলো। (সহিহ বুখারি: ৯১৮, ২০৯৫)

ওএফএফ/জিকেএস