বিনোদন

সংগীত সাধনায় অর্ধশতাব্দী: ৮৫-তে আব্দুল হাদী

বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সৈয়দ আব্দুল হাদী। বাংলা গানের ইতিহাসে তার অবদান অনস্বীকার্য। আজ এই বরেণ্য শিল্পীর ৮৫তম জন্মদিন। ১৯৪০ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার শাহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে আগরতলা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কলকাতায়। তবে শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় গেছে তার রংপুর ও ঢাকায়।

ছোটবেলা থেকেই গান ছিল তার নেশা। বাবার সংগ্রহে থাকা গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে গান শোনা আর বাবার সুরে গাওয়া ছিল তার প্রথম সংগীতশিক্ষা। গান শিখেছেন গাইতে গাইতে, অনুভব আর চর্চা দিয়ে।

১৯৫৮ সালে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। এখান থেকেই অর্জন করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পরে শিক্ষকতা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে, পাশাপাশি কাজ করেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবে। সর্বশেষ কর্মজীবন কাটিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ওয়েলস ইউনিভার্সিটিতে প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান হিসেবে।

তবে মূল পরিচয় তিনি একজন কণ্ঠশিল্পী। সংগীতের সঙ্গে তার পথচলা শুরু ছাত্রাবস্থায়। ১৯৬০ সালে চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে ‘ডাকবাবু’ চলচ্চিত্রে প্রথম একক কণ্ঠে গান করেন। মো. মনিরুজ্জামানের লেখা ও আলী হোসেনের সুরে সেই গান দিয়েই চলচ্চিত্রে তার যাত্রা শুরু হয়।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি উপহার দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক জনপ্রিয় গান। তার গাওয়া কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আছেন আমার মোক্তার’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘এই পৃথিবীর পান্থশালায়’, ‘চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে’, ‘সখি চলনা জলসা ঘরে যাই’, ‘আমি তোমারই প্রেম ভিক্ষারী’, ‘চোখ বুঝিলে দুনিয়া আন্ধার’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তে তুমি’, ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে’, ‘কথা বলবো না বলেছি’—এই গানগুলো আজও বাংলা গানের শ্রোতাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে।

তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০০ সালে সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদকে ভূষিত হন।

শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আইয়ের গান দিয়ে শুরুর বিশেষ পর্ব সরাসরি সম্প্রচারিত হবে ১ জুলাই সকাল ৭টার সংবাদের পরপর। এই অনুষ্ঠানে সৈয়দ আব্দুল হাদীর গাওয়া জনপ্রিয় গান পরিবেশন করবেন এ প্রজন্মের শিল্পী মহারাজা, আলাউদ্দিন এবং শানু। অনুষ্ঠানে সৈয়দ আব্দুল হাদীর উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র এবং শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা থাকবে।

বাংলা সংগীতের এই মহান কারিগরের কণ্ঠে যে আবেগ, যে মমতা তা আজও হাজারও শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সৈয়দ আব্দুল হাদীর প্রতি।

এলআইএ/জিকেএস