সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণের প্রধান লক্ষ্য ছিল মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এই নীতি অনুসারে বৃদ্ধি করা হয় সুদের হার এবং স্বভাবতই প্রভাব পড়ে বিনিয়োগে। বর্ধিত নীতি সুদ হারের ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো উচ্চহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে; ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকে অর্থের সরবরাহ এবং ঋণের খরচও বাড়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ব্যবসা হয়ে পড়ে ব্যয়বহুল, যার প্রভাবে বিনিয়োগ হ্রাস পায়। বিনিয়োগ হ্রাস পেলে কমে উৎপাদন, কর্মসংস্থানের মতো বিষয়গুলো।
মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে নেওয়া এ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ফলে নিম্নমুখী বেসরকারি ঋণপ্রবাহ কমে অর্থনীতিকে করতে পারে অস্থিতিশীল, কমতে পারে প্রবৃদ্ধি এবং নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। গত অর্থবছর বাংলাদেশে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কম দাড়িয়েছে ৭ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল প্রায় ১০.৩৫ শতাংশ এবং করোনা মহামারির সময় ছিল ৭.৫৫ শতাংশ। একইসাথে চলমান রেপো রেট ১০ শতাংশ হওয়ায় বেসরকারি খাতে সুদের হার দাঁড়ায় প্রায় ১৬ শতাংশ। এই রেপো রেট রাখার একমাত্র লক্ষ্য ছিল মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে রেখে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হরো পণ্যের উৎপাদন স্থান থেকে ভোক্তা পর্যায়ে আসা পর্যন্ত অনেক হাতবদল হয় এবং অনেক চাঁদাবাজি হয়। মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে শুধু সুদের হার বিবেচনায় না এনে বাজার মনিটরিং, চাহি্দা-জোগান সামঞ্জস্য রাখা, অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় কমানোর মতো পদক্ষেপও হতে পারে হাতিয়ার। এছাড়া কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানো, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, মধ্যস্থতাকারীদের বিলোপ করেও মূল্যস্ফীতি কমানো যেতে পারে।
এ বছরও যদি রেপো রেট বাড়ানো হয় বা একই রাখা হয় বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমতে পারে আরও, ফলে বিনিয়োগ কমার সাথে সাথে নতুন উদ্যোগও নিরুৎসাহিত হতে পাড়ে। পাশাপাশি বর্ধিত ঋণ খরচের ফলে বাড়বে উৎপাদন খরচ এবং চূড়ান্ত পণ্যের দাম; ফলে ঘটতে পারে মূল্যস্ফীতি।বর্ধিত খরচে উৎপাদন কমলে আয় কমবে ফলে রাজস্ব আদায়ও কমে যাবে। এছাড়া রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় সরকার ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণ করার ফলেও ঘটছে তারল্য সংকট। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে দারুণভাবে। এছাড়া সুদের হার বাড়লে মুদ্রার মান বাড়ে। ফলে রপ্তানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পায় এবং আমদানি পণ্যের দাম হ্রাস পায়। মূল্যবৃদ্ধির কারণে রপ্তানি কমে এবং আমদানি বৃদ্ধি পায়। ফলে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতি একমাত্র হাতিয়ার নয়। মুদ্রানীতির সাথে রাজস্বনীতি এবং বাজারনীতির মাঝে সমন্বয় থাকতে হবে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের নির্দিষ্টধার তার প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনীতি থেকে অনেক বেশি। যে কারণে বাংলাদেশ রপ্তানি বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পারছে না। ২০২২ সাল থেকে মুদ্রানীতিতে ১১ বার নীতি সুদ হার বাড়ানো সত্ত্বেও মূলনীতি কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়েনি, কারণ বাংলাদেশে সমস্যা অন্য ধরনের। কৃত্রিমভাবে বাজারে সংকট তৈরি করা হয় এবং সরবরাহ চ্যানেল খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পণ্যের উৎপাদন স্থান থেকে ভোক্তা পর্যায়ে আসা পর্যন্ত অনেক হাতবদল হয় এবং অনেক চাঁদাবাজি হয়। মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে শুধু সুদের হার বিবেচনায় না এনে বাজার মনিটরিং, চাহি্দা-জোগান সামঞ্জস্য রাখা, অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় কমানোর মতো পদক্ষেপও হতে পারে হাতিয়ার। এছাড়া কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানো, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, মধ্যস্থতাকারীদের বিলোপ করেও মূল্যস্ফীতি কমানো যেতে পারে।
লেখক : প্রভাষক, ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/এএসএম