বয়স যত বাড়ে, জীবন তত জটিল হয়। কাজের চাপ, সংসার, সামাজিক দায়িত্ব– সবকিছুই মিলে আমরা অনেক সময় নিজের খেয়াল রাখা ভুলে যাই। এই চাপের ভিড়ে যদি পাশে থাকে একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু, তাহলে জীবনটা কিছুটা হলেও সহজ হয়। কিন্তু কেন?
>> বন্ধুত্ব মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ওষুধের মতো
হার্ভার্ড স্টাডি অব অ্যাডাল্ট ডেভেলপমেন্ট, পৃথিবীর দীর্ঘতম চলমান গবেষণা, যেখানে ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের জীবন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে– একজন মানুষের সুখ ও সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের, বিশেষ করে বন্ধুত্বের, সরাসরি সম্পর্ক আছে। গবেষণার প্রধান গবেষক রবার্ট ওয়াল্ডিঙ্গার বলেন, ‘ভালো সম্পর্ক আমাদের সুখী রাখে। সেইসঙ্গে আমাদের শরীর ও মনের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।’
>> স্ট্রেস কমায়, উদ্বেগ দূর করে
প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনে স্ট্রেস অনেক সাধারণ একটি বিষয়। আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন এর মতে, ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা কেবল শোনে না, তারা সহানুভূতির সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানায়। এতে মানসিক চাপ হ্রাস পায়, মানসিক ভারসাম্য রক্ষা হয়।
বন্ধুদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করলেই দেখা যায়, হৃদস্পন্দন কিছুটা কমে আসে, কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোন কমে যায়। এটা কেবল মন ভাল করা নয়, শরীরের জন্যও উপকারী।
>> একাকিত্ব দূর করেসামাজিক একাকিত্ব প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনে নীরব রোগের মতো। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং জানিয়েছে, দীর্ঘদিন একা থাকা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি অ্যালজাইমারের ঝুঁকি বাড়ায়।
অথচ একজন বন্ধুর ফোন, হঠাৎ দেখা বা মেসেজেই এই একাকীত্ব খানিকটা ভেঙে যায়। বন্ধু থাকা মানেই একাকীত্বের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী ঢাল।
>> সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাপোর্টপ্রাপ্তবয়স্ক জীবনের বড় সিদ্ধান্ত – চাকরি বদল, সম্পর্কের জটিলতা, পরিবার নিয়ে সংকট – নেওয়ার সময় বন্ধুরাই হয় প্রথম ফোন কল। মায়ো ক্লিনিক জানিয়েছে, নিকট বন্ধুদের মতামত আমাদের সিদ্ধান্তে বাস্তবতা ও ভারসাম্য নিয়ে আসে। বিশেষ করে এমন বন্ধু, যিনি আপনার ব্যক্তিত্ব, মূল্যবোধ, দুর্বলতা – সব কিছু জানেন, তার পরামর্শ অনেক বেশি কার্যকর।
>> বন্ধুত্ব শুধু মানসিক নয়, শারীরিকভাবেও উপকার করেকার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি। এমনকি ঠান্ডা-জ্বরের মতো সাধারণ অসুখও কম হয়।
আবার বন্ধুরা প্রায়ই আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলে – একসঙ্গে হাঁটতে যাওয়া, খাওয়া নিয়ে সচেতনতা, মনের অবস্থার খোঁজ রাখা – সব মিলিয়ে তারা আমাদের সুস্থ জীবন যাপনের প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হলেও প্রয়োজনীয়। ছোটবেলায় বন্ধুত্ব সহজে হয়, কিন্তু বড় হলে কাজ, সময়, অবস্থান এসবের কারণে বন্ধুত্ব ধরে রাখা কঠিন হয়। তবে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার কথা মাথায় রেখে হলেও, এ সম্পর্কগুলো ধরে রাখার চেষ্টাটা জরুরি। কারণ বন্ধুত্ব মানে শুধু আড্ডা নয়, এটি একধরনের মানসিক আশ্রয়।
প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে যদি কেউ সত্যিকারের বন্ধু হয়ে ওঠে – যাকে আপনি বিশ্বাস করেন, যে আপনার পাশে থাকবে – তাহলে সেই সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন। সময় দিন, খোঁজ রাখুন, সম্পর্কটা একতরফা না হয়ে ওঠে সেটাও নিশ্চিত করুন। কারণ একটা নির্ভরযোগ্য বন্ধুত্ব আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য – দুইয়ের জন্যই এক দুর্লভ আশীর্বাদ।
সূত্র: হার্ভার্ড স্টাডি অব অ্যাডাল্ট ডেভেলপমেন্ট, আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অন এজিং, কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়, মায়ো ক্লিনিক
এএমপি/জিকেএস