জীবন ও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হতে বাধ্য হচ্ছে অসহায় শিশুরা। সরকারি তথ্য অনুসারে সারাদেশে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু এখনও শ্রমিক। যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জীবিকার তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। অর্থাৎ ১২ লাখ শিশু দারিদ্র্যের কশাঘাতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এদের অধিকাংশরই বিদ্যালয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শিশুশ্রম সংক্রান্ত সর্বশেষ জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। বিবিএস জরিপে বলা হয়েছে, কয়েক বছর আগেও সরকারিভাবে সারাদেশে ৯৯ শতাংশের বেশি শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই একটি বড় অংশ বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়ছে। দারিদ্রের কারণে এদের কেউ কেউ বাস, টেম্পো, হিউম্যান হলারে সহকারী হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। আবার কেউবা চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, মোটরগাড়ি ও রিকশার গ্যারেজ, সাইকেল নির্মাণ কারখানা, ইটভাটাসহ নানা ধরনের ছোট ছোট কারখানায় কাজ করছে। বাসাবাড়িতে এখনও শিশু শ্রমিক লক্ষ্য করা যায়। মেয়ে শিশু শ্রমিকের পাশাপাশি ছেলে শিশুদেরও রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। জরিপে আরো বলা হয়েছে, মূলত পাঁচ খাতে এসব শিশু কাজ করছে শিশুরা। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার অন্যতম কারণ দারিদ্র। এসব শিশুর বেশিরভাগই বিদ্যালয়ে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে না। এছাড়া বাবা-মার অনাগ্রহ, কাছাকাছি দূরত্বে বিদ্যালয় না থাকা, গৃহস্থালির কাজ ও শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতার অভাবেও এসব শিশু শ্রমিক হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, শিশুশ্রম রোধের উপায় হিসেবে আমরা শিশুশিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। ঝড়ে পড়া রোধে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এজন্য দেশে শিশু শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসছে দাবি করে তিনি বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ সকল চাকরি বন্ধ করে দিতে সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। বিবিএসের তথ্য অনুসারে, দেশের মোট শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৬ লাখ। এর মধ্যে সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু শ্রমিক। এক দশক আগের জরিপে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ। যাদের বয়স ৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে প্রায় ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। যা মোট শিশু শ্রমিকের এক-তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে রয়েছে : পরিবহন এবং গুদামজাতকরণ, পাইকারি এবং খুচরা ব্যবস্যা, যানবাহন মেরামত, নির্মাণ খাত এবং খনিজ খাত। এছাড়া কৃষি, বন ও মৎস্য খাতেও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশুরা। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিশু কাজ করছে খনিজ খাতে। প্রায় ৩৩ দশমিক ৩০ শতাংশ শিশু কাজ করে এ খাতটিতে। সরকারি সংস্থারটির জরিপে শিশুদের কর্মস্থলকে আট কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অভিহিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে : স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ যন্ত্রপাতি, আগুন-গ্যাস, ধুলাবালি এবং ঝাঁকুনিপূর্ণ স্থান, অত্যাধিক গরম এবং উত্তপ্ত, ভূগর্ভস্থ অথবা অতি উচ্চতায়, পানি, অন্ধকার বা আবদ্ধ স্থান, রাসায়নিক ও বিস্ফোরক নিয়ে কাজ। শিশু শ্রমিকরা ধুলাবালি এবং স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ যন্ত্রপাতিসংক্রান্ত কাজ বেশি করছে। বিবিএসের জরিপে উঠে এসেছে, দেশের সবচেয়ে বেশি প্রায় ১৪ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এর পরেই চট্টগ্রামের অবস্থান। রংপুর বিভাগেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু শ্রমিক রয়েছে। বরিশালে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে কম। এ প্রসঙ্গে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, নারী ও শিশুর সামগ্রিক উন্নয়ন ছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এসডিজি পাঁচ দফার জেন্ডার ইক্যুইটি অর্জনসহ আরো যে সমস্ত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে নারী ও শিশু জড়িত তা অর্জনে ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে। এমডিজি অর্জনের সফলতার মতোই বাংলাদেশ এসডিজি অর্জনে সফল হবে। এমএ/জেএইচ/এসএইচএস/পিআর