দেশজুড়ে

মৃত্যু ঝুঁকি থাকলেও পাহাড় ছাড়ছে না হাজারো মানুষ

রমজানের প্রথমদিন থেকে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে থেমে থেমে ভারি বর্ষণ। বৃষ্টির সঙ্গে চলছে দমকা বাতাস ও বজ্রপাত। ফলে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধ্বসের শঙ্কা। কিন্তু পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে প্রশাসনের তৎপরতা নেই তেমন। তবে প্রশাসনের দাবি বৃহস্পতিবার থেকে কিছু কিছু পাহাড়ি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু এতে কোনো সাড়া মিলছে না। সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে কয়েক লাখ মানুষ। এর মধ্যে কক্সবাজার শহরেই ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। তবে অনেকেই বলছে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা শুধুমাত্র মাইকিং এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানি ঠেকানো যাচ্ছেনা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে কঠোর অভিযান চালিয়ে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া, বৈদ্যঘোনা, পাহাড়তলী, সাহিত্যিকাপল্লী, লারপাড়া, আর্দশগ্রাম, নতুন পুলিশ লাইন, কলাতলী, লাইটহাউস, টেকনাইফ্ফা পাহাড়সহ ২০টি এলাকায় পাহাড়ের চূঁড়া ও পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সবাই সেখানে পাহাড় কেটে বসতি গড়েছে। তাদের অধিংকাশই এখনো পাহাড় কাটছে। কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসের শঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। মানবাধিকার কমিশন কক্সবাজার’র সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, পাহাড় ধ্বসে কক্সবাজারে গত কয়েক বছরে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। কিন্তু এরপরও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাস থেমে নেই। থামছে না পাহাড় কাটাও। জেলায় লক্ষাধিক মানুষ এখনও পাহাড়ের চূঁড়ায় এবং পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে প্রচারণা চালানো হলেও তারা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও জোরালো ভূমিকার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানান তিনি। কক্সবাজারে পাহাড়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বসবাস করা হয় কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে। এসব পাহাড়ি এলাকা অধিকাংশই বন বিভাগের রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমি। পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারে অর্ধশত এলাকায় পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে লক্ষাধিক মানুষ বসতি তৈরি করেছে। আর বৃষ্টির সময় পানির সঙ্গে পাহাড়ি মাটি ভাসিয়ে দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, ‘এসব এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয়েছে পাহাড় কাটার অনেক সরঞ্জামও। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতরের একার পক্ষে পাহাড় কাটা বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিতে বাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বলা হয়েছে মাইকিং করে সতর্ক করতে। গত একমাস আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে অভিযানও চালানো হয়েছে। উল্লেখ্য, কক্সবাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ১৫ জুন। ওই দিন ভোরে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলায় পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় অকালে ঝরে পড়েছিল সেনাবাহিনীর ৬ সদস্যসহ ৫৪টি প্রাণ। এর আগে ২০০৮ সালের ৪ ও ৫ জুলাই টেকনাফের টুইন্যার পাহাড় ও ফকিরামুরা এলাকায় পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জনসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়। পরে ২০১২ সালের ২২ জুন রাতে ভয়াবহ পাহাড় ধ্বস, পাহাড় চাপা, বজ্রপাত ও পানিতে ডুবে মারা যান ৪৯ জন। গত বছর শহরের লাইট হাউজ এলাকায় পাড় ধ্বসে ছয় জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত বছরের ২৭ জুন ভারি বর্ষণে ঘোনার পাড়া, বৈদ্যঘোনা, খাজামঞ্জিল, লাইটহাউজ, কলাতলী, ডিসি বাস ভবনের সামনে ও মোহাজের পাড়া এলাকায় পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় কক্সবাজার ও টেকনাফে মারা যান ৩ জন। কিন্তু মৃত্যুর এ মিছিল দীর্ঘ হলেও পাহাড় থেকে সরানো যাচ্ছে না এখানে বসবাসকারিদের। এফএ/এবিএস