সময়টা ২০২১ সালের নভেম্বর, বিশ্ব প্রযুক্তিতে যুক্ত হলো নতুন এক মাত্রা। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি সামনে আনলো মাইক্রোসফটের ওপেন এআই। চ্যাটজিপিটি এআইয়ের এক অন্যতম আবিষ্কার, যা আমাদের জীবনে যেন আশীর্বাদ হয়ে এলো।
প্রযুক্তির এই আবিষ্কার জীবনকে অনেক সহজ করেছে। যে কোনো প্রশ্ন করলেই সহজে উত্তর দিয়ে দেয় সে। শুধু গুরুগম্ভীর আলোচনা নয়, সে লিখে দেয় কবিতা। রেসিপি থেকে শুরু করে গণিত সমাধান, ভার্সিটির অ্যাসাইনমেন্ট, রিপোর্টের সব ধরনের কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
কিন্তু জানেন কি, চ্যাটজিপিটিকে কিছু কথা আছে যা বলা একেবারেই ঠিক না। বিপদে পড়তে পারেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে লোকেরা পরামর্শের জন্য এআই চ্যাটবটগুলো আরও ঘন ঘন ব্যবহার করছে। বিশেষজ্ঞরা এই সরঞ্জামগুলোর উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যের জন্য।
চ্যাটবটগুলো আপাতদৃষ্টিতে ইউজার-ফ্রেন্ডলি এবং নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়। তবে, স্বাস্থ্যের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা তাদের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদনে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য মতে, পাঁচজনের মধ্যে একজন আমেরিকান এআই থেকে স্বাস্থ্য পরামর্শ চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, গত বছরের একটি জরিপে দেখা গেছে যে প্রায় ২৫ শতাংশ আমেরিকান ঐতিহ্যবাহী থেরাপির চেয়ে চ্যাটবট বেছে নেওয়া পছন্দ করছেন। এই ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার প্রেক্ষিতেই বিশেষজ্ঞরা চ্যাটজিপিটি এবং অন্যান্য এআই চ্যাটবটগুলোর সঙ্গে ব্যক্তিগত বা চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করার বিরুদ্ধে সতর্ক করছেন।
৭টি জিনিসের কথা যা চ্যাটজিপিটি এবং অন্যান্য এআই চ্যাটবটকে কখনো বলা বা জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়! আসুন জেনে নিন সেসব-
ব্যক্তিগত তথ্যনাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর বা ই-মেইল অ্যাড্রেস এআই চ্যাটবটগুলোর সঙ্গে কখনই শেয়ার করা চলবে না। এই তথ্য ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করতে এবং তার কার্যকলাপ ট্র্যাক করতে ব্যবহার করা হতে পারে।
আর্থিক তথ্যআর্থিক তথ্য, যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি কখনোই এআই চ্যাটবটের সঙ্গে শেয়ার করা চলবে না। এই তথ্য ইউজারের টাকা বা আপনার পরিচয় চুরি করতে ব্যবহার করা হতে পারে।
এআই চ্যাটবটসের কাছে কখনই নিজের পাসওয়ার্ড শেয়ার করা চলবে না। এই তথ্য ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করতে এবং তার ডাটা চুরি করতে ব্যবহার করা হতে পারে।
নিজের গোপন কথাএআই চ্যাটবটসের কাছে কখনই নিজের গোপন কথা শেয়ার করা উচিত নয়। কাছের মানুষকেও এই ব্যাপারে সব সময় নির্ভর করা যায় না, সেখানে চ্যাটজিপিটিকে বিশ্বাস করা কঠিন বটে! সে ব্যক্তি নয় এবং ব্যবহারকারীর গোপন কথা সুরক্ষিত রাখবে তা মনে করাটাই বড় ভুল!
চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য পরামর্শআর যা-ই হোক, এআই ডাক্তার নয়, তাই কখনই এআই-এর কাছে স্বাস্থ্য পরামর্শ চাওয়া উচিত হবে না। এছাড়াও বিমা নম্বরসহ স্বাস্থ্যের বিবরণ কখনো শেয়ার করা চলবে না।
স্পষ্ট কন্টেন্টবেশিরভাগ চ্যাটবট তাদের সঙ্গে শেয়ার করা যে কোনো স্পষ্ট জিনিস ফিল্টার করে, তাই অনুপযুক্ত কনটেন্ট ব্যবহারকারীকে ব্যান করতে পারে। শুধু তাই নয়, মনে রাখতে হবে যে ইন্টারনেট কখনো কিছু ভুলে যায় না। তাই জোর দিয়ে বলা যায় না যে এগুলো কোথায় ভেসে উঠতে পারে!
এমন কিছু যা পৃথিবীকে জানানোর দরকার নেইমনে রাখবেন আপনি যা কিছু এআই চ্যাটবটকে বলছেন, সবকিছু চ্যাটবট সেভ করে রাখবে। হতে পারে এগুলো সে অন্য কোথাও তথ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। কিংবা অন্যদের জানিয়ে দিচ্ছে। তাই কখনোই এআই চ্যাটবটকে এমন কিছু বলা উচিত নয়, যা আপনি সারা বিশ্বকে জানাতে চান না।
আরও পড়ুন
এআইকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা বিপজ্জনক চ্যাটজিপিটিকে যেসব প্রশ্ন ভুলেও করবেন নাসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
কেএসকে/এমএস/এএমপি