সাতক্ষীরার কৃষকেরা উচ্চ ফলনশীল ও লবণাক্ততা সহনশীল বিনাধান-২৩ জাত চাষ করে আশার আলো দেখছেন। চলতি আমন মৌসুমে প্রথমবারের মতো আমন ধান কাটা শুরু হলো। ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নের ছনকা গ্রামে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উপকেন্দ্রের উদ্যোগে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ধান কাটা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলে ধান উৎপাদনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা। বিনাধান-২৩ এসব প্রতিকূলতা সহ্য করতে সক্ষম। এটি একটি সম্ভাবনাময় জাত। কম খরচে কম সময়ে বেশি উৎপাদন হয়। অন্য জাতের তুলনায় ১৫ দিন আগে ধান কাটা যায়। এরপর অগ্রীম সরিষাসহ অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব। এ অঞ্চলের আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় আগামীতে এ জাতের ধান চাষ আরও বাড়বে। বাংলাদেশে আজই প্রথম এ জাতের ধান কাটার মধ্য দিয়ে আমন মৌসুমের ধান কাটা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মো. কামরুজ্জামান, সদর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা প্লাবনী সরকার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান এবং মিলন কবীর। স্থানীয় কৃষকেরাও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন মাঠ দিবসে।
ছনকা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ধানটা আমাদের এলাকার জন্য অনেক ভালো। কম লবণাক্ত আর জমে থাকা জমিতে এর চাষে কোনো সমস্যা হয় না। খরচ কম, ফলনও বেশি। জৈব সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক খুবই কম লাগে। আগের আমন ধানের চেয়ে এবার বেশি ফলন পেয়েছি। ১ বিঘা জমিতে চাষ করলেও আগামী বছর ৫ বিঘা জমিতে চাষ করবো।’
একই এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমরা চিন্তায় থাকতাম, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জমিতে পানি ঢুকলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু এবার বিনাধান-২৩ চাষ করে দেখি ১৫ দিন পানির নিচে থেকেও ক্ষতি হয়নি। এতে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।’
আরও পড়ুনব্ল্যাক কুইন তরমুজ চাষে ৭০ দিনে লাখ টাকা আয় শিবপুরে আখ চাষে দ্বিগুণ লাভ, কৃষকের মুখে হাসি
বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিনাধান-২৩ মূলত জোয়ার-ভাটা ও লবণাক্ত এলাকায় কৃষকদের জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর জীবনকাল মাত্র ১১৫-১২৫ দিন। তবে সাতক্ষীরায় মাত্র ১১২ দিনে ধান কাটা হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা কম সময়ে ধান ঘরে তুলতে পারেন। তাছাড়া কম সার ও কম সেচ দিয়েই ভালো ফলন হয়, যা কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘এই জাত ৮ ডিএস বা মিটার পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। ১৫ দিন পর্যন্ত জলমগ্ন অবস্থায় টিকে থাকতে সক্ষম। ফলে সাতক্ষীরার মতো উপকূলীয় অঞ্চলে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা প্লাবনী সরকার বলেন, ‘উপকূলীয় কৃষকেরা বরাবরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিনাধান-২৩ যদি ব্যাপকভাবে চাষ হয়, তবে কৃষকেরা লাভবান হবেন। ধান উৎপাদনও বাড়বে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এই জাতের ধান উপকূলীয় অঞ্চলে ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত হলে ধান উৎপাদন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কৃষকেরা কম খরচে বেশি ফলন পেয়ে স্বাবলম্বী হবেন।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষকেরা জানান, বিনাধান-২৩ এর ফলন ও সহনশীলতা দেখে তারা আগামী বছর আরও বেশি জমিতে এই জাতের ধান চাষ করতে আগ্রহী।
আহসানুর রহমান রাজীব/এসইউ/জিকেএস