বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। যেখানে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জমির সংকোচন ও প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার কৃষিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এ প্রেক্ষাপটে উন্নত দেশের কৃষি ব্যবস্থাপনা আমাদের জন্য একটি আদর্শ হতে পারে। তাদের উদ্ভাবনী পদ্ধতি, প্রযুক্তি ব্যবহার ও কৃষক কল্যাণের মডেল অনুসরণ করে আমরা বাংলাদেশের কৃষিকে আরও আধুনিক, টেকসই ও লাভজনক করে তুলতে পারি।
যান্ত্রিকীকরণউন্নত দেশগুলোতে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ব্যাপক। যেমন- ট্রাক্টর, কম্বাইন্ড হারভেস্টর, ড্রোন ব্যবহার করে সময় ও শ্রম সাশ্রয় হয়। ড্রোন দিয়ে জমির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ, কীটনাশক ছেটানো ও ফলনের পূর্বাভাস দেওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রযুক্তিগুলোর ধীরে ধীরে বিস্তার ঘটছে। তবে তা এখনো সীমিত। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সহজ শর্তে যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
স্মার্ট ফার্মিং উন্নত দেশগুলোতে এআই, আইওটি, সেন্সর ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে। জমির আর্দ্রতা, পুষ্টি ও রোগের অবস্থা জানা যায়। সঠিক সময়ে সেচ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে স্মার্ট ফার্মিং চালু করতে হলে কৃষকদের ডিজিটাল প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মোবাইল, মোবাইল অ্যাপ, নেট ও স্থানীয় ভাষায় প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে হবে।
গবেষণা ও উদ্ভাবনউন্নত দেশগুলোতে কৃষি গবেষণায় বিপুল বিনিয়োগ হয়। উচ্চফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী ও জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে ফসলের গুণগত মান বাড়ানো হয়। বাংলাদেশে ব্রি, বিএআরআই, বিএলআরআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করে গবেষণার পরিধি বাড়াতে হবে।
ডিজিটাল সাপ্লাই চেইনউন্নত দেশগুলোতে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কৃষক সরাসরি ভোক্তার সঙ্গে যুক্ত হন। লজিস্টিকস ও ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশে কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস তৈরি করতে হবে। কোল্ড চেইন ও পরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিকতা আনতে হবে।
আরও পড়ুনপ্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জকৃষিজমি রক্ষায় চ্যালেঞ্জ খাদ্যনিরাপত্তা
অর্গানিক কৃষিউন্নত দেশে অর্গানিক ফার্মিং জনপ্রিয়। রাসায়নিকমুক্ত, পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য উৎপাদন হয়। বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। বাংলাদেশে অর্গানিক কৃষিকে উৎসাহিত করতে সার্টিফিকেশন ও ব্র্যান্ডিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
কৃষক কল্যাণ ও সামাজিক সুরক্ষাউন্নত দেশে কৃষকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা, কৃষি বীমা, অবসর ভাতা ও দুর্যোগ সহায়তা রয়েছে। বাংলাদেশে কৃষকদের জন্য বীমা স্কিম সহজ করতে হবে। ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন ও সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণউন্নত দেশে কৃষকেরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন। টেকনিক্যাল কলেজ ও অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে। বাংলাদেশে উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। মোবাইলভিত্তিক শিক্ষা ও ভিডিও টিউটোরিয়াল চালু করা যেতে পারে।
উন্নত দেশের কৃষি ব্যবস্থাপনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশে স্মার্ট কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তির সহজলভ্যতা। কৃষকের ক্ষমতায়ন। গবেষণা ও নীতিগত সহায়তা। এ পথে এগিয়ে গেলে বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই হবে না বরং রপ্তানিমুখী ও পরিবেশবান্ধব কৃষি অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাবে।
এসইউ/এএসএম