কর্মব্যস্ত জীবনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাইরে ছুটে চলাই যেন রুটিন। অফিস, যানজট, ধুলাবালি, রোদ—সব মিলিয়ে দিনের শেষে ত্বক মলিন হয়ে যায়। ত্বকের স্বাভাবিক কোমলতা ও উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায় ধীরে ধীরে। অথচ নিয়মিত একটু ত্বকের যত্নের রুটিন পারে এই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে ত্বকের যত্নের নানা বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ার সেন্টারের রূপচর্চা পরামর্শক শারমিন কচি।
ত্বকের যত সমস্যা>> সারাদিন অফিস বা বাইরে থাকার ফলে ত্বকের উপর প্রভাব পড়ে। বাইরে থাকাকালীন ত্বকের সার্ফেস লেয়ারের বাইরের অংশটুকু ধুলো বহন করে। অনেকেই ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং—এই তিনটি ধাপ অনুসরণ করে বাইরে বের হোন।
>> সেসময় ত্বক নাজুক এবং স্কিনটা পরিষ্কার থাকে। আর পরিষ্কার ত্বকই ধুলাবালি বহন করে থাকে। এই ধুলোটা ত্বকের লোমকূপের ভিতরে যায়। ফলে লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং ইনফেকশন হয়। এ ছাড়া বাইরের ধুলোবালি ইনফেকশনের পাশাপাশি অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ায়।
>> এতে ত্বকের সারফেস লেয়ারের ক্ষতি হয় এবং ত্বকের লোমকূপগুলো বন্ধ করে দেয়। ফলে নেচারাল সিবাম প্রডিউস বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায়। এতে লোমকূপের গোড়াগুলো বন্ধ হয়ে ফুলে ওঠে — ইনফেকশন হয়। ফলে একনে, ব্রন ও অ্যালার্জিটিক সমস্যা দেখা যায়।
>> বিভিন্ন ঋতুতে অ্যালার্জিগুলো শুধু ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের স্বাভাবিক গঠন ও উজ্জ্বলতাও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাছাড়া অতিরিক্ত তাপমাত্রা বা সূর্যের আলো আমাদের ত্বকে প্রভাব ফেলে। এতে ত্বক লাল হয়ে যায়, জ্বালা ভাব করে। অতিরিক্ত ইউভি রশ্মির কারণে মেলানিন বাড়ে, ফলে ত্বক কালচে হয়। তাহলে উপায়?
১. ত্বকের উজ্জ্বলতায় স্কিন কেয়ায় রুটিন
রূপচর্চা পরামর্শক শারমিন কচি বলেন, ত্বকের প্রাকৃতিক কোমলতা ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে স্কিন কেয়ার রুটিন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। রুটিনের মধ্যে থাকবে ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং এবং সিরাম। এই ধাপগুলি মেনে চললে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও কোমলতা স্বাভাবিক থাকবে।
তিনি দিনের যেকোন সময় পাঁচ মিনিট ক্লিনজিং, পাঁচ মিনিট টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিং করে ত্বকটা হাইড্রেড করার পরামর্শ দেন। রাতের বেলায় ফেসটা ওয়াটার ক্লিনিং বা লাইট ময়েশ্চারাইজিং দিয়ে ক্লিনিং-টোনিং করে সানস্ক্রিন বা সিরাম ব্যবহার করতে হবে। সিরাম সকাল এবং রাতের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবহার করতে হয়।
এই রুটিনটা মেনে চললে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও কোমলতা ধরে রাখা যায়। বর্তমানে বাইরের তীব্র গরমে সুথিং জেল ব্যবহার করতে পারেন। এটাও খুব ভালো কাজ করে।
২. ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্নের টিপস
>> ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং—এই ধাপগুলি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় করতে হবে।
>> প্রতি ১৫ দিন অন্তর স্ক্রাব করতে হবে।
>> সেইসঙ্গে ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে হবে। এক মাস পর করলেও হবে। তবে যারা বাইরে কাজ করেন তাদের ১৫ দিন পর পর করলে ত্বকটা ভালো থাকবে।
>> বাজারে সব ব্র্যান্ডের ক্লিনজিং, টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিং পাওয়া যায়। যাচাই-বাছাই করে ক্লিনজার, টোনার, স্ক্রাবার নিতে পারলে বাসায় বসেই হোম ফেসিয়াল নিতে পারবেন।
>> প্যাক তৈরিতে অর্গানিক প্যাকগুলো ব্যবহার করা যায়। মসুরের ডাল, বেসন, দুধের সর, কাঁচা হলুদের পেস্ট, এক চামচ মধু — এই মিশ্রনটা তৈরি করে মুখের ত্বকে মাখলে খুব ভালো কাজ করে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক অর্গানিক প্যাকগুলোও খুব ভালো কাজে দেয়।
৩. ত্বকের যত্নে ভূল অভ্যাস
>> অনেক নারীরা অতিরিক্ত মেকাপ ব্যবহার করেন — এটা ভূল অভ্যাস। প্রতিদিন ভারী মেকাপ করলে লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে একনে ও ব্রন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
>> আরেকটা জরুরি বিষয় হচ্ছে, অনেকেই নিয়ম অনুযায়ী ক্লিনজিং ব্যবহার করেনা। নিজের মতো করে স্ক্রাবিং করে থাকেন। এতে ত্বকের সারফেস লেয়ারে অনেক বেশি ক্ষতি হয়।
>> এ ছাড়া নামসর্বস্ব কসমেটিকস প্রোডাক্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে বলে জানান শারমিন কচি। কসমেটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মেকাপের ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা পর ভালোভাবে ফেস ক্লিন করতে হবে। এরপর ডাবল ক্লিনজিং করে কসমেটিক অ্যাপ্লাই করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
৪. পুরুষদের ত্বকের যত্ন
নারীদের ত্বকের তুলনায় পুরুষের ত্বকের লেয়ার কিছুটা ভারী। তবুও নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও ত্বকের যত্ন নিতে হবে। তাদের দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে ও রোদের মধ্যে থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে ক্লিনজিং বিষয়টা মাথায় নিতে হবে।
শারমিন কচি আরও বলেন, পুরুষের ত্বকে অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তাই ডাবল ক্লিনজিং করা যেতে পারে। পাশাপাশি সবসময় মুখ ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। সপ্তাহে একটা করে ফেসপ্যাক ব্যবহার করা যায়। এতে ত্বক স্বাভাবিক থাকে। প্রতিদিন আইস থেরাপি নিতে পারলে আরও ভালো হয়।
এএমপি/এএসএম