তানজিদ শুভ্র
গ্রামবাংলার আঙিনা থেকে শুরু করে শহরের ব্যস্ত সড়কেও ফুটে থাকে নানা রঙের ফুল। ঋতুভেদে বর্ণিল সাজে ফোটে, ছড়ায় সৌরভ। প্রতিটি ফুলের আছে ইতিহাস আর হৃদয়ের টান। ফুলগুলো কেবল রং ও সুবাসই দেয় না, দেয় জীবনের স্নিগ্ধতা। চাইলে হাতের কাছেই পাবেন এসব ফুল। চাষ করতে পারেন বাড়ির আঙিনা, খোলা জায়গা কিংবা ছাদে।
শিউলিশরৎকালের অমোঘ প্রতীক শিউলি। রাতের আঁধারে ফুটে ভোরের আলো আসতেই ঝরে যায় বলে অনেকে বলেন ‘নিশিপুষ্পী’। গ্রামের উঠান, মসজিদের আঙিনা কিংবা প্রভাতের পথ—সবখানেই শিউলি দেখা যায়। বাতাসে ভেসে আসে মিষ্টি সুবাস। শরতের দূত হয়ে শিউলি জানিয়ে দেয় নতুন ঋতুর আগমন। শুভ্র পাঁপড়ি আর কমলা ডাঁটের মিশেলে এ ফুলের সৌন্দর্য অনন্য।
কাশফুলশরতের অন্যতম আকর্ষণ হলো কাশফুল। শুভ্রতার প্রতীক এই ফুল জানিয়ে দেয় শরতের আগমন। নদীর তীরে, মাঠের ধারে কিংবা পতিত জমিতে হঠাৎ করেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় কাশফুল। কাশফুল শুধু শোভা নয়, শরতের অপরূপ বার্তাবাহকও বটে। নীল আকাশে সাদা মেঘের খেলা, শীতল বাতাস আর দিগন্তজোড়া কাশবনের দোল খাওয়ার দৃশ্য মিলিয়ে শরতের অনন্য মায়া সৃষ্টি হয়।
শুভ্র ভালোবাসার নাম বেলি। তারুণ্যের কাছে এটি প্রেম আর রোমান্টিকতার প্রতীক। মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণে ছোট্ট সাদা ফুল গ্রীষ্মের সন্ধ্যা ও রাতে ফোটে। চারপাশে ছড়িয়ে দেয় স্বর্গীয় সুবাস। বেলি শুধু ফুল নয়, তরুণীদের সাজের অন্যতম অনুষঙ্গও বটে। কখনো মালা হয়ে গলায়, কখনো হাতে গাঁজরা, আবার কখনো চুলে গুঁজে দিয়ে আনে অন্যরকম সৌন্দর্য। বেলি দিয়ে তৈরি হয় চা, আতর ও গয়না।
আরও পড়ুনচারপাশে উঁকি মারছে দীপ্ত লুচি, চেনেন কি? বাংলাদেশের মাটিতে ল্যাভেন্ডার চাষ করা সম্ভব
ভৃঙ্গরাজঅযত্নে বেড়ে ওঠা ভেষজ উদ্ভিদ ভৃঙ্গরাজ। রাস্তার ধারে, মাঠে কিংবা বাড়ির আঙিনায় সহজেই জন্মে। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এ গাছ দেখা যায়। তবে ভেজা বা আর্দ্র জায়গা এর জন্য বিশেষ উপযোগী। ভৃঙ্গরাজ দেখতে সাধারণ। চকচকে সবুজ পাতার আড়ালে ফোটে ছোট্ট হলুদ ফুল। প্রজাতিভেদে ফুল নীল এবং সাদাও হয়।
রঙ্গনরঙ্গন মানেই রঙের সমাহার। প্রজাতি ও জাতভেদে এর ফুল ঘন লাল, গোলাপি, কমলা, হলুদ, সাদা—এমনকি দোরঙা রঙ্গনও দেখা যায়। ছোট ছোট ফুল একসাথে গুচ্ছ হয়ে ফোটে, যেন উৎসবের আল্পনা মেলে ধরে। রঙ্গন শহুরে বাগানে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাড়ির আঙিনা, পার্ক কিংবা অফিস প্রাঙ্গণ—যেখানেই থাকুক, রঙ্গন মানেই আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া।
কাঠগোলাপ নান্দনিক ফুল। সাদা-হলদে পাঁপড়ি যেন অনন্ত শান্তির প্রতীক। এর হালকা ঘ্রাণ ভেসে এলে মনে হয় প্রকৃতি নিঃশব্দে ফিসফিস করছে। কোনো কোনো ফুল একেবারে দুধের মতো সাদা, কোনোটি সাদা পাঁপড়ির গায়ে হলুদ দাগ, আবার কোনোটি লালচে-গোলাপি আভা ছড়ায়। বাগান, মসজিদ, মন্দির কিংবা বাড়ির উঠান—সবখানেই এ গাছের উপস্থিতি দৃষ্টি কাড়ে।
প্রকৃতি আমাদের দিয়েছে অগণিত ফুল। প্রতিটি ফুল একেকটি শোভা, একেকটি উপকারিতা, একেকটি মধুর স্মৃতি। ফুলকে ভালোবাসা মানেই প্রকৃতিকে ভালোবাসা। প্রকৃতিকে ভালোবাসা মানেই জীবনকে বাঁচানো।
লেখক: শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।
এসইউ/জিকেএস