বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি কলকাতার নিজ বাড়ি পারিজাতে মারা যান। মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর জন্মস্থান মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার (সাবেক কালকিনি) কাজী বাকাই ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে কোনো আয়োজন নেই। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তাঁর জন্মভিটা।
জানা যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৪ বছর বয়সে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। ৫৫ বছর পর মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার কাজী বাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের পৈতৃক ভিটায় আসেন। ২০০৩ সালে প্রথম এসেছিলেন তিনি। শেষবার ২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর তাঁর ৭৫তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে জন্মভিটায় ৩ দিনের জন্য এসেছিলেন।
যেভাবে খুঁজে পান জন্মভিটাকলকাতার সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় ‘মাটি ও মানুষের টানে’ লেখায় তাঁর পিতৃভিটার বর্ণনা করেছিলেন। সেখানে লিখেছেন তাঁর বাড়ি পূর্ব মাইজপাড়ায়। তবে বাড়িটি কোথায় ছিল তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি। পরে মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক ডা. এমএ বারী ভূমি অফিসে গিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেটে খুঁজে বের করেন কবির জন্মভিটার স্থান। বিভিন্ন মিডিয়ায় এ সংবাদ ছাপার পরে কবি তাঁর পৈতৃক ভিটার সন্ধান পান।
যখন এসেছিলেন পৈতৃক ভিটায় ২০০৩ সালে প্রথম এসেছিলেন। শেষবার ২০০৮ সালে। তখন তাঁর সাথে ছিলেন স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। এ ছাড়া ভারতের আসানসোল থেকে এসেছিলেন কবি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ মন্ডল। লেখকের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন দুই সহোদর প্রফেসর অনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, বোন কনা গঙ্গোপাধ্যায় এবং কানাডা প্রবাসী বন্ধু দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী।
এ সময় তিনি জন্মভিটায় নির্মিত ‘সুনীল আকাশ’ ভবন, সুনীল সাহিত্যচর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এখানে কিছু বই ও ছবি আছে। ২০০৩ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মাদারীপুরে প্রথম আসার পর সুনীল সাহিত্য ট্রাস্টের সূচনা হয়। সেই ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রতি বছর ছোটগল্পের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়। ‘সুনীল সহিত্য পুরস্কার’ প্রথমে মাদারীপুরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ যোগ হয়। একসময় সারাদেশে বিস্তার হবে বলে আশা থাকলেও ২০১১ সালের পর থেকে তা-ও বন্ধ আছে।
চির বিদায়২০০৮ সালের ২৩ নভেম্বর সকালে কবি তাঁর পৈতৃক বাড়ির আঙিনায় বৃক্ষরোপণ করেন। পরে ওই দিনই কলকাতার উদ্দেশ্যে জন্মভিটা ত্যাগ করেন। যাওয়ার সময় বলেন, ‘মাদারীপুরসহ বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি শুধু ওপার বাংলার কবি নই। আমি বাংলা ভাষার কবি।’ এরপর আর পৈতৃক ভিটায় আসা হয়নি। ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি কলকাতার নিজ বাড়িতে মারা যান।
আরও পড়ুনসুনীলের জন্মভিটায় এ কোন আলোসুনীলের পৈতৃক ভিটার স্মৃতি রক্ষিত হয়নি
সুশীল সমাজ ও প্রশাসনের বক্তব্যস্থানীয় মিঠু হোসেন শিকদার বলেন, ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এ মাটিতে জন্মগ্রহণ করায় আমরা গর্বিত। তিনি আমাদের মনে রেখেছিলেন। আমাদের ডাকে ছুটে এসেছিলেন। আমরা তাঁকে আজীবন স্মরণ রাখবো। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। আজ তাঁর মৃত্যুদিনে কোনো আয়োজন থাকলে ভালো হতো।’
মাইজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আ. রহিম বলেন, ‘মাইজপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করায় আমরা ধন্য। তিনি আমাদের বিরাট এক সম্পদ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো আয়োজন নেই। সবার উচিত ছিল দুই বাংলার এই লেখককে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে স্মরণ করা। এটা না হওয়ায় আমরা লজ্জিত।’
সুমন হাওলাদার বলেন, ‘তিনি সর্বশেষ ২০০৮ সালে এসেছিলেন। সুনীল মেলা উদ্বোধন করেছেন। আমরা চাই সুনীল মেলা প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হোক। তার স্মৃতি অম্লান থাকুক। তিনি মারা যাওয়ার পর এই মেলা আর তেমন হয়নি। প্রশাসন বা সরকারিভাবে এই মেলার আয়োজন হলে সুনীল ভক্তদের ভালো লাগতো।’
ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, ‘দুই বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটায় সুনীল আকাশ ভবন, সুনীল সাহিত্যচর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। এটা রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। তাছাড়া এমন একজন গুণী মানুষের মৃত্যুদিনে তাঁর পৈতৃক ভিটায় কোনো আয়োজন নেই, সেটাও দুঃখজনক।’
ডাসার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইফ-উল-আরেফীন বলেন, ‘লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিন উপলক্ষে কোনো কিছু করার নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। তাছাড়া তাঁর পৈতৃক ভিটা দেখাশোনা করা বা এ সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারেও ওপর থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই। যদি কখনও নির্দেশনা আসে, তাহলে তা পালন করা হবে।’
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসইউ/এএসএম