লাইফস্টাইল

যে গাউনের প্রতিটি নকশা বলছে পৃথিবী বাঁচানোর কথা

বলিউডের ফ্যাশন দুনিয়ায় সোনম কাপুর শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি এক চলমান অনুপ্রেরণা। তার পোশাক যেন প্রতিবারই বলে, ফ্যাশন শুধু আভিজাত্যের নয়-এটি হতে পারে এক শক্তিশালী ভাষা, যা বলে যায় সংস্কৃতি, সচেতনতা আর পৃথিবী রক্ষার কথা।

লন্ডন ফ্যাশন উইকের বসন্ত–গ্রীষ্ম ২০২৬ মৌসুমে আর্দেম মোরালিওগ্লুর রেডি-টু-ওয়্যার শোতে তার উপস্থিতি ছিল এক নিঃশব্দ বার্তা ‘গ্ল্যামারের মধ্যেও বেঁচে থাকুক পৃথিবী’।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামের রাজকীয় আলো-আঁধারিতে সোনমের পরনে ছিল আইভরি রঙের এক শিল্পিত গাউন, যেটির বুকজুড়ে সূক্ষ্ম নীল সুতোয় ফুটে উঠেছিল ভারতের অতি বিরল পাখি ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড’-এর প্রতিচ্ছবি। একসময় যে পাখি ছিল ভারতের মরুভূমি জুড়ে, আজ সেটিই বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।

বর্তমানে মাত্র ১৭০টির মতো জীবিত। সোনমের পোশাকের প্রতিটি সূচিকর্ম যেন সেই হারিয়ে যাওয়া প্রাণের আর্তি শোনাচ্ছিল।

সোনম কাপুরের ফ্যাশন-ভাবনা কখনোই কেবল রঙ, নকশা বা ট্রেন্ডে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি জানেন, পোশাক হতে পারে প্রতিবাদেরও প্রতীক। এই গাউনের প্রতিটি ছোঁয়া যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল-প্রকৃতির প্রতি আমাদের অবহেলাই একে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

সেই নীলচে নকশার সঙ্গে মানানসই নীলকান্তমণির গয়না, হালকা মেকআপ, টানা চুল আর শান্ত আত্মবিশ্বাসে ভরা চোখ সব মিলিয়ে সোনম যেন এক নিস্তব্ধ বার্তাবাহক। যিনি বলছেন, ‘সৌন্দর্য তখনই পরিপূর্ণ, যখন তা জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

বছরের পর বছর ধরে সোনমের পোশাক বেছে নেওয়া যেন এক নীরব আন্দোলন। কখনো নারী স্বাধীনতার কণ্ঠস্বর, কখনো সংস্কৃতির গর্ব, আবার কখনো প্রকৃতি সংরক্ষণের অঙ্গীকার। তার প্রতিটি উপস্থিতি বলে-ফ্যাশন মানেই বিলাসিতা নয়, বরং দায়বদ্ধতার আরেক রূপ।

লন্ডনের সেই রানওয়েতে তাই কেবল পোশাক প্রদর্শিত হয়নি; প্রদর্শিত হয়েছে এক ভাবনা-পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণই আমাদের অস্তিত্বের অংশ। ফ্যাশন যদি সেই কথা পৌঁছে দিতে পারে বিশ্বমঞ্চে, তবে সেটিই তার সার্থকতা।

সোনম কাপুর যেন সেই আইভরি গাউনের মতোই এক প্রতীক-যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিকতা, গ্ল্যামার ও দায়বদ্ধতা, সৌন্দর্য ও সংবেদন সব একসাথে জড়িয়ে আছে এক সূতোয়। তার উপস্থিতি মনে করিয়ে দেয়, ফ্যাশন শুধু চোখে লাগে না, হৃদয়েও কথা বলে।

তাই লন্ডনের ফ্যাশন উইকের সেই সন্ধ্যা শুধু রঙিন পোশাকের প্রদর্শনী নয়, ছিল এক গভীর আহ্বান, ‘পৃথিবীকে বাঁচাও, সৌন্দর্যকে বাঁচাও।’

জেএস/