মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
খেতে কে না পছন্দ করেন? তা যদি হয় মিরপুরের কাল্লুর চাপ, শওকতের কাবাব, গ্রান্ড চান্দু শাহি নেহারি, সুরুজের বিরিয়ানি; তাহলে তো কথাই নেই। সপ্তাহে ছুটির দিনটা হলেও পরিবার নিয়ে একটু বাসার বাইরে অনেকেই যান। জনপ্রিয় খাবারগুলোর স্বাদ অনুভব করেন। তুলনামূলক কম দামের। মানও একেবারে মন্দ নয়। সে কারণে এই খাবার অনেকেই বেছে নেন। এবার তাহলে রাজধানীর মিরপুরের কিছু বিখ্যাত খাবারের খবর জেনে নিন।
কাল্লু কাবাব ঘরমিরপুর বড় মসজিদের সামনের মোড়ে কাল্লু কাবাব ঘর। মিরপুর এগারো বাসস্ট্যান্ড নেমে যে রাস্তা মিরপুর ১১ বাজারের মধ্যদিয়ে গেছে, সেটা ধরে সোজা গেলেই দেখা মিলবে কাল্লু কাবার ঘরের। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে কাল্লু কাবাব। দোকানের সামনে রাস্তায়, ভবনের দোতলায় বসার ব্যবস্থা আছে। যেটা আপনার পছন্দ; সেটা বেছে নিতে পারবেন। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। মুরগি, গরুর মাংস মেরিনেট করাই থাকে। আপনি বলার পর সামনে বসে ভেজে দেবে। তারা একবার ভাজা শেষে তেল থাকলে; সেই তেলে আর ভাজাভাজি করেন না। ওখানে বসে না খেলে খাবার প্যাকেট করে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। এখানে গরুর চাপ, মুরগির চাপ, লুচি, মগজ ভুনা খেতে পারবেন। গরুর চাপের দাম ১৬০ টাকা, মুরগির চাপ ১৫০ টাকা, মগজের প্লেট ৩০০ টাকা। লুচি প্রতি পিস ১০ টাকা।
শওকতের কাবাববেনারসি পল্লির শওকতের কাবার ৫৪ বছর ধরে মিরপুরবাসীর মন জয় করে টিকে আছে। বয়স বাড়লেও মানের অবনতি হয়নি। শওকত সাহেব নেই। তার ছেলে দোকান পরিচালনা করেন। বেনারসি পল্লির ২ নাম্বার গেটে নেমে রিকশাওয়ালাকে শওকতের দোকানের কথা বললেই হবে। সেখানে যেতে একটুও বেগ পেতে হবে না। শওকতের কাবাবে ঝাল কম। ফলে ছোট-বড় কারো খেতে সমস্যা হয় না। পুদিনা পাতা, কাঁচামরিচ, শসার সালাদ তো আছেই। সাথে তেঁতুলের টক দেয়। এখানে মগজের চাপ, চিকেন বটি কাবাব, খাসির হাফ চাপ, বিফ চাপ, বিফ শামি কাবাব, বিফ কাটলেট, চিকেন টিকা, গরুর বুলি কাবাব, চিকেন চাপ ইত্যাদি খেতে পারবেন। লুচি ১০ টাকা, চিকেন চাপ হাফ ১৩০ টাকা, খাসির হাফ চাপ ২০০ টাকা, মগজের চাপ ৬০ টাকা, বিফ চাপ হাফ ১৮০ টাকা, বিফ শামি কাবাব ১০ টাকা, বিফ কাকলেট ১০ টাকা, চিকেন টিকা ১০ টাকা, গরুর বুলি কাবাব ৫ টাকা পিস।
গ্রান্ড চান্দু শাহি নেহারিনেহারি প্রিয়দের পছন্দের জায়গা পল্লবীর সেকশন ১২-এর ই-ব্লকের কুর্মিটোলা ক্যাম্পসংলগ্ন গ্রান্ড চান্দু শাহি নেহারি। মহিষের নেহারিগুলো সাইজে বেশ বড়। চান্দু শেখ নিজেই নেহারি রান্নার তদারকি করে থাকেন। ২২ রকমের মসলা আর বাদামের কারণে নেহারির ঝোলটাও হয় বেশ ঘন আর মজার। নেহারি-লুচি ছাড়াও রমজান মাসে পাওয়া যায় স্পেশ্যাল হালিম। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় বেচাকেনা, চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। খুরা গিড়া ২৫০ টাকা (দুই পিস), নলি ৩৬০ টাকা (এক পিস)।
আরও পড়ুনঘোড়া চালানো শিখতে পারবেন ঢাকার ৩০০ ফিটেবিলীনের পথে মাটির খেলনা, কুমারপল্লিতে বিষাদের ছায়া
প্ল্যান বিচকলেটপ্রেমীদের জন্য অত্যন্ত পছন্দের খাবারের দোকান মিরপুর লাভ রোডের প্ল্যান বি। এখানকার রাজকচুরি খুবই জনপ্রিয়। এই খাবারে তারা ব্যবহার করেন দই, আইসক্রিম চকলেট চিপস, চকলেট সিরাপ; সঙ্গে থাকে চানাচুর, খেজুর, কিশমিশ ও কাজুবাদাম আরও কত কী। স্বাদ না হয়ে উপায় আছে? ভিন্নধর্মী এই খাবারের দাম পড়বে ১৪০ টাকা।
রাব্বানী হোটেলের চারাব্বানীর চা পছন্দ করেন না, এমন চা-প্রেমী কমই আছেন। বিভিন্ন ধরনের চা এখানে আছে। গরুর দুধের সাধারণ চা। দুধের বা মালাই দিয়ে চা। ৩২ বছর ধরে তারা মিরপুরে ব্যবসা করছেন। প্রতি কাপ চা ২৫ টাকা।
খিচুড়ি বাড়িমিরপুর স্টেডিয়ামের চার নাম্বার গেটের পাশেই অবস্থিত খিচুড়ি বাড়ি। ছোট্ট দোকানে শুধু খিচুড়িই নয়, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হান্ডির স্বাদে ভরপুর নানা রকম খাবারের একটি আধার। দুইজন লোক নিয়ে শুরু হওয়া ছোট্ট দোকানটি এখন ৪০ জন কর্মীর একটি পরিবার। বিকেলবেলা এবং বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এখানে প্রচুর মানুষ খেতে আসেন। এখানে চুইঝাল, ভর্তা, পোলাও ১৫০ টাকা। গরুর চার পিস মাংস, তিন রকমের ভর্তা, খিচুড়ি দাম পড়বে ২০০ টাকা। এক পিস মাটন, খিচুড়ি অথবা পোলাও ২৫০ টাকা। হান্ডি হাঁস চার পিস মাংস সাথে পোলাও ভাত যেটা নেন ২৫০ টাকা। নলির দাম ৩০০ টাকা, সাথে খিচুড়ি অথবা পোলাও থাকবে। এখানকার হান্ডি হাঁস, মাটন খুব জনপ্রিয়। যখনই খান না কেন। খাবার গরম পাওয়া যাবে।
আরও কিছু খাবারমিরপুর ১০ নাম্বারের আইডিয়াল গার্লস স্কুলের সামনে, কচুক্ষেত রজনী গন্ধ্যা মাকের্ট এবং মোবাইল মার্কেটের বিপরীত পাশে, মিরপুর ১২ ডি ব্লক ঈদগাহ মাঠের পাশে, মিরপুর ১৪ ব্যাটেলিয়ান বউ বাজারে বড় মসজিদের পাশে বাহারি খাবারের পসরা আছে। এসব জায়গায় ফুচকা, দই ফুচকা, নানা রকম জুস, পানিপুরি, ভেলপুরি, পিৎজা, ছোট-বড় নানা আকারের বার্গার, সাব স্যান্ডুইজ, ভেজিট্যাবল রোল, নুডলস, চটপটি, চিকেন ফ্রাই, ফ্রাইড রাইস, বিভিন্ন মসলার পান, চা, চিতই পিঠা, নানা রকম ভর্তা বিক্রি হয়।
এসইউ/জেআইএম