লাইফস্টাইল

দীর্ঘদিন ভেজাল খাবার খেলে শরীরে কী ঘটে

আজকাল বাজারে এমন কোনো পণ্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল যেখানে ভেজালের ছোঁয়া নেই। দুধ, তেল, মসলা থেকে শুরু করে ফল, সবজি, মাংস — সবকিছুতে কোনো না কোনোভাবে রাসায়নিক বা কৃত্রিম উপাদান মেশানো হচ্ছে।

একবারের জন্য এসব খেলে হয়তো তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা না-ও দেখা দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ভেজাল খাবার শরীরের ভেতরে সৃষ্টি করে নীরব বিপর্যয়।

১. লিভার ও কিডনি

দীর্ঘদিন ধরে ভেজালযুক্ত খাবার খেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি। কারণ, খাবারের সঙ্গে থাকা রাসায়নিক যেমন ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, সিসা, রং বা মেলামাইন শরীরে প্রবেশ করে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এই বিষাক্ত উপাদানগুলো লিভারের বিষক্রিয়া বাড়িয়ে দিয়ে তার স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত করে। ধীরে ধীরে দেখা দেয় লিভার সিরোসিস, হেপাটাইটিস বা কিডনি বিকল হওয়ার মতো জটিল রোগ।

২. ক্যানসারের ঝুঁকি

এসব ভেজাল রাসায়নিক শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে ফরমালিন বা কৃত্রিম রঙে থাকা নিকেল ও ক্রোমিয়াম নামের ভারী ধাতু দীর্ঘদিন শরীরে জমে থেকে কোষের ডিএনএ নষ্ট করে দেয়, যার ফলেই ক্যানসার হতে পারে।

৩. শিশুদের কিডনিতে পাথর

শিশুদের ক্ষেত্রে ভেজাল খাবার আরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। মেলামাইনযুক্ত দুধ বা কৃত্রিম রঙ মেশানো মিষ্টি শিশুদের কিডনিতে পাথর তৈরি করে, বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং মানসিক বিকাশে বাধা দেয়।

৪. হরমোনের অসামঞ্জস্য

আর প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা দিতে পারে হরমোনের অসামঞ্জস্য, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, এমনকি প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস। গর্ভবতী নারীরা নিয়মিত ভেজাল খাবার খেলে নবজাতকের জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষক্রিয়াই একসময় শরীরের ভেতরে জমে দীর্ঘস্থায়ী রোগের রূপ নেয়। তাই খাবার কেনার সময় সতর্ক থাকা, রাসায়নিকের গন্ধ বা রঙে পরিবর্তন টের পাওয়া গেলে তা এড়িয়ে চলা জরুরি।

আজ (৫ নভেম্বর) স্বাস্থ্যকর খাদ্য দিবসে নিজের ও পরিবারের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নতুন করে চিন্তা করুন - এই ভেজালের যুগেও কীভাবে একটু স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা যায়। পরিষ্কার পানি, ঘরে তৈরি খাবার এবং মৌসুমি ফল-সবজিতে গুরুত্ব দিন।

সূত্র: ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

এএমপি/জিকেএস