গলার ঠিক নিচে ছোট্ট এক গ্রন্থি - দেখতে প্রজাপতির মতো। কিন্তু এই ক্ষুদ্র অঙ্গটাই শরীরের গতি, শক্তি আর মেজাজ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রাণবন্ত নাকি ক্লান্ত বোধ করছেন, ওজন বাড়ছে না কমছে, এমনকি মনের স্থিরতাও অনেকটাই নির্ভর করে এই থাইরয়েড হরমোনের ওপর।
তাই একে শরীরের “ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিট” বললেও ভুল হয় না। কিন্তু যখন এই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন নিঃশব্দে পুরো শরীরের ছন্দটাই বদলে যেতে থাকে—যা অনেক সময় আমরা টেরও পাই না।
থাইরয়েড থেকে দুটি প্রধান হরমোন তৈরি হয়। টি–থ্রি (ট্রাই–আয়োডো–থাইরোনিন) ও টি–ফোর (থাইরক্সিন)। এই দুটি হরমোন শরীরের বিপাকক্রিয়া বা শক্তি ব্যবহারের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
হরমোন কমে গেলে কী হয়যখন থাইরয়েড হরমোন কমে যায়, তখন শরীরের ‘গতি’ কমে যায়। অর্থাৎ, মানুষ তখন সবসময় ক্লান্ত বোধ করে, ওজন বেড়ে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, চুল পড়ে, মনমরা ভাব দেখা দেয়, ঠান্ডা বেশি লাগে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। আমেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো সময় থাইরয়েড সমস্যায় ভোগেন।
অন্যদিকে, হরমোন বেড়ে গেলে শরীরের গতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। তখন ওজন কমে যায়, হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, ঘুম কমে, উদ্বেগ বাড়ে, হাত কাঁপে—এই উপসর্গগুলো দেখা দেয়। মায়ো ক্লিনিক জানিয়েছে, অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কারণ ও ঝুঁকিথাইরয়েডের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে—>> অটোইমিউন রোগ (গ্রেভস বা হাশিমোটো রোগ)>> আয়োডিনের ঘাটতি বা অতিরিক্ততা>> মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব>> গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের সময় হরমোন পরিবর্তন
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে যা করবেনসঠিক খাবার (আয়োডিন, সেলেনিয়াম ও জিঙ্কসমৃদ্ধ খাদ্য), পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও মানসিক প্রশান্তি—সবকিছুই থাইরয়েড হরমোনকে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে। তবে সমস্যা ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই ওষুধ বন্ধ বা শুরু করা উচিত নয়।
সূত্র: আমেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন, মায়ো ক্লিনিক, হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (যুক্তরাষ্ট্র)
এএমপি/জিকেএস