নিউমোনিয়া রোগের নামটা শুনলেই একটা চাপা উদ্বেগ কাজ করে। শীতের শুরুতে যখন ঠাণ্ডা লাগা বা কাশির সমস্যা বাড়ে, তখন এই রোগ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিশ্বজুড়ে নিউমোনিয়ার নাম উঠে আসে বারবার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। এই নীরব ঘাতকের কবল থেকে আমাদের শিশুদের রক্ষা করতে দরকার সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়, উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সচেতনতা।
আজ (১২ নভেম্বর) বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। এ উপলক্ষ্যে জাগো নিউজের সঙ্গে নিউমোনিয়ার লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ সুলতানা।
তিনি বলেন, নিউমোনিয়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ, যা প্রতি বছর ৭২৫,০০০-এরও বেশি শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী। বাংলাদেশসহ নিম্ন আয়ের দেশে এর ঝুঁকি আরও বেশি।
বিশ্বব্যাপী প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে একজন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এর ফলে দ্রুত শ্বাসকষ্ট, হাইপোক্সিয়া, সেপসিসের মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অভিভাবকদের এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা দরকার।
শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ -১. জ্বরের সঙ্গে কাশি ও দ্রুত শ্বাস নেওয়া।
২. বুকের খাঁচার নীচের অংশ শ্বাস নেওয়ার সময় ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।
৩. শ্বাস নেওয়ার সময় গরগর শব্দ বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক শব্দ হওয়া।
৪. হাম, ডিপথেরিয়া বা অন্যান্য সংক্রমণের পর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া।
এগুলো ছাড়া আরও কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলো দেখলে তাৎক্ষণিক শিশুকে হাসপাতালে নেবেন ->> খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া বা পানিও খেতে না পারা।>> অবসাদ বা অস্বাভাবিক ঘুম।>> নীলাভ ঠোঁট, জিহ্বা। >> কাঁদার শক্তি কমে যাওয়া।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে শিশুকে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়। যেমন -১. সিভিয়ার নিউমোনিয়া
২. অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়া
৩. খেতে না পারার সঙ্গে পানিশূন্যতা
৪. খিঁচুনি হওয়া
৫. শিশু অচেতন হয়ে গেলে
৬. শিশুর বয়স দুই থেকে তিন মাসের কম হলে এবং গুরুতর উপসর্গ থাকলে।
শীতকালে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে কেন?ঠান্ডায় ভাইরাল ইনফেকশন (রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস) বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাসে শ্বাসনালীর প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
তাই শিশুকে নিউমোনিয়া থেকে বাঁচাতে শীতের শুরুতেই ঠান্ডা থেকে শিশুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাইরাসের সংস্পর্শ এড়াতে ভিড় এড়িয়ে চলুন। ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল রাখার ব্যবস্থা করুন, তবে ঘর বেশি ঠান্ডা না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সেই সঙ্গে শিশু দের হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
এএমপি/জেআইএম