লাইফস্টাইল

যৌন সামঞ্জস্য, সম্পর্কের অদৃশ্য শক্তিশালী বন্ধন

সম্প্রতি ‘ভ্রমণকন্যা’ খ্যাত ডা. সাকিয়া হকের সঙ্গে তার স্বামী জয়ন্তের সম্পর্ক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। ডা. সাকিয়া হক নিজেই তার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট থেকে লাইভে এসে তার স্বামীর পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তাদের মধ্যে সেক্সুয়াল কম্প্যাটিবিলিটি না থাকার অভিযোগ এনে ডা. সাকিয়ার স্বামী তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করতে চাইছেন।

ডা. সাকিয়া হক ও জয়ন্তের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘যৌন সামঞ্জস্য বা সেকসুয়াল কম্প্যাটিবিলিটি’ নিয়ে বেশ কৌতূহল জন্মেছে। আসলে আমাদের সমাজে এই বিষয়ে কখনো খোলামেলা আলোচনা হয় না। এমনকি অনেকে জানেনই না আসলে এই ‘সেক্সুয়াল কম্প্যাটিবিলিটি’ কি?

মূলত যৌন সামঞ্জস্য বা সেকসুয়াল কম্প্যাটিবিলিটি বিষয়টি সম্পর্কে অনেক কথা শোনা গেলেও এর আনুষ্ঠানিক কোনো সংজ্ঞা নেই। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও যৌন-স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. ক্রিস্টোফার রায়ান জোনস বলেন, ‘এটা এমন কিছু নয় যা ডিএসএম বা কোনো অভিধানে নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত থাকে।’

তবে সাইকোলজি টুডে যৌন সামঞ্জস্যকে ব্যাখ্যা করে, ‘একজন দম্পতি কতটা অনুভব করেন যে তাদের যৌন বিশ্বাস, পছন্দ, আগ্রহ ও প্রয়োজন একে অপরের সঙ্গে মিলছে-সেই মাত্রাই যৌন সামঞ্জস্য। এছাড়া উভয়ের ‘টার্ন অন’ ও ‘টার্ন অফ’-এর মিলকেও যৌন সামঞ্জস্যের একটি দিক হিসেবে গণ্য করা হয়।’ সহজভাবে বললে, যৌনতা নিয়ে দুজন মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস, চাহিদা ও ইচ্ছা কতটা একে অপরের সঙ্গে মিলে তাই হল যৌন সামঞ্জস্য।

ড. জোনসের মতে, ‘যৌনতার কাঙ্ক্ষিত সময়, ঘনত্ব ও স্থায়িত্ব; কেমন পরিবেশে যৌনতা পছন্দ; কোন বিষয় আপনাকে উত্তেজিত করে বা আগ্রহহীন করে; সম্পর্কের কাঠামো ও প্রতিশ্রুতির ধরন-এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে যত বেশি মিল পাওয়া যাবে, যৌন সামঞ্জস্যও তত বেশি হবে।’ অর্থাৎ নিজের যৌন পছন্দ সম্পর্কে সৎভাবে জানা ও তা নিয়ে খোলামেলা কথা বলাই সামঞ্জস্য বোঝার প্রথম ধাপ।

বিশ্বাস বা ধারণার বিষয়টি কোথায় আসে?

যৌনতা বলতে ঠিক কী বোঝায়?- এই প্রশ্নটি ১০০ জন মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করলে ১০০ রকম উত্তর মিলবে। কারণ প্রত্যেকের যৌনতার সংজ্ঞা আলাদা। কারও কাছে পেনিস-ইন-ভ্যাজাইনা হলে সেটাই ‘সেক্স’। কারও কাছে অ্যানাল, ওরাল বা ম্যানুয়াল সেক্সও একইভাবে যৌনতার অংশ। এখানে কোনো সংজ্ঞাই ভুল নয়।

বিশেষজ্ঞ জেনি স্কাইলার বলেন, ‘যৌনতার সংজ্ঞা সম্পর্কে একই ধারণা থাকা বা অন্তত একে অপরের ধারণা সম্পর্কে জানা, যৌন প্রত্যাশায় সমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।’ এ ছাড়া, কারও কাছে বিয়ের আগে যৌনতা অগ্রহণযোগ্য, কারও কাছে তা স্বাভাবিক।

ড. জোনস বলেন, ‘এ নিয়ে একই বিশ্বাস থাকা জরুরি নয়। বরং একে অপরের বিশ্বাসকে সম্মান করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ তবে কিছু জায়গায় আপোষ চলে না। যেমন: একজন যদি একগামিতা চান এবং অন্যজন যদি খোলামেলা বা নন-মোনোগামাস সম্পর্ক চান, তাহলে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এমনকি সম্পর্কটি মোনোগামাস বা নন-মোনোগামাস যাই হোক, তাকে প্রতারণা ধরা হবে এ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।

চাহিদা ও ইচ্ছার ভূমিকা কোথায়?

যৌন সামঞ্জস্য কেবল ‘বিয়ের আগে বা পরে’ বা ‘একজন সঙ্গী নাকি একাধিক’ এতেই সীমাবদ্ধ নয়। যৌনতার পরিবেশ, কোথায় যৌনতা করতে পছন্দ, আলো জ্বালানো নাকি নিভিয়ে, সঙ্গীত থাকবে কিনা, ঘরের তাপমাত্রা কেমন- এগুলো পরিবেশগত পছন্দ। দু’জনের পছন্দ একেবারে বিপরীত হলে সমস্যা হতে পারে।

৫ মিনিট আর ৫ ঘণ্টা-এ দু’টি অভিজ্ঞতা একই নয়। একজন ম্যারাথন সেক্স পছন্দ করলে আরেকজনও যদি একই পছন্দ করেন, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কোন যৌন অভ্যাসগুলো পছন্দ, একজনের প্রিয় কাজগুলো যদি অন্যজনকে বারবার আপোষ করতে বাধ্য করে তখন অসামঞ্জস্য তৈরি হয়। যৌনতার ঘনত্ব, মাসে কয়েকবার, সপ্তাহে একবার, নাকি প্রতিদিন? কোনোটাই ভুল নয়, তবে দু’জনের প্রত্যাশা একই হওয়াই ভালো।

লিবিডো বা যৌন আকাঙ্কার পরিবর্তন

গর্ভধারণ, সন্তান, কাজের চাপ, ওষুধ, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ইত্যাদির কারণে লিবিডো ওঠানামা করে। তাই লিবিডো সম্পর্কেও কথা বলা জরুরি। জেনি স্কাইলার বলেন, ‘পরিবেশ বা সময়ের মতো ব্যাপারগুলো নিয়ে কথায়-বার্তায় আপোষ করা সম্ভব। এগুলো যৌন-বদ্ধতার মতো কঠোর বিষয় নয়।’

এটা কি স্বাভাবিকভাবে বোঝা যায়? কখনো যায়, কখনো যায় না। এ বিষয়ে ড. জোনস বলেন, ‘শুধু অনুভব করে বোঝা যায় না সবসময়। যোগাযোগই সবচেয়ে ভালো উপায়।’ সেক্সের আগে, সময়ে ও পরে এ নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। এটি শুধু সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়ার জন্য নয়, সচেতন সম্মতি বোঝার জন্যও সমানভাবে জরুরি।

সম্পূর্ণভাবে কথা বলার আগে কিছু বিষয় লক্ষ্য করা যেতে পারে। যেমন- আপনার যৌন অনুরোধে তার প্রতিক্রিয়া কেমন? পাবলিক ডিসপ্লে অব অ্যাফেকশনে আপনাদের মতের মিল আছে কিনা; উভয়েই কি ফ্লার্টি বা সেক্সি টেক্সটিং পছন্দ করেন কি না? একই জিনিস কি আপনাদের উত্তেজিত করে? তবে শেষ পর্যন্ত খোলামেলা কথা বলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

কীভাবে বিষয়টি তোলা যায়?

বিষয়টি তুলার জন্য প্রথমে নিজেকে তৈরি করুন, তারপর নিরপেক্ষ পরিবেশ বেছে নিন যেমন- লং ড্রাইভ, পার্কে হাঁটতে যাওয়া, কফি ডেট ইত্যাদি। ড. জোনস এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা একবারের কথা নয়। বয়স আর অভিজ্ঞতার সঙ্গে যৌন পছন্দও বদলায়। তাই নিয়মিত কথা বলা প্রয়োজন।’ দুজনের মধ্যে সম্পূর্ণ মিল না থাকলেও আপোষ ও যোগাযোগের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব।”

সময় কি যৌন সামঞ্জস্য বাড়াতে পারে?

হ্যাঁ, অবশ্যই পারে। জেনি স্কাইলারের মতে, ‘সম্পর্ক যত এগোয়, যোগাযোগ ও বোঝাপড়া বাড়ার ফলে যৌন সামঞ্জস্যও বাড়ে।’ যৌন সামঞ্জস্য মানে, যৌনতা নিয়ে দু’জন মানুষের বিশ্বাস, চাহিদা ও ইচ্ছার যত বেশি মিল, তত বেশি সামঞ্জস্য।

যদি মিল একেবারে নিখুঁত না–ও হয় যোগাযোগ, সম্মান ও আপোষের মাধ্যমে তা উন্নত করা সম্ভব। তবে যদি দেখেন যে মৌলিক দিকগুলোতেই মিল নেই সেটাও স্বাভাবিক। সব সম্পর্ক একই রকম থাকে না বা টিকিয়ে রাখার জন্যই তৈরি হয় না।

তথ্যসূত্র- হেলথ লাইন

জেএস/