হাবিবুল বাশারের মতো তিনি মুশফিকুর রহিমের প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন নন। তবে ২০০৫ সালের মে মাসে লর্ডসে ইংল্যান্ডের সাথে মুশফিকুর রহিমের যখন টেস্ট অভিষেক হয়, তখন মোহাম্মদ আশরাফুল ছিলেন তার সিনিয়র পার্টনার।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক পরিসংখ্যান, তথ্য-উপাত্ত তার নখদর্পণে। পাশাপাশি ইতিহাসটাও আশরাফুলের খুব ভালো জানা। তার স্মরণশক্তিও সমসাময়িক ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তাই স্মৃতি হাতড়ে আশরাফুল বের করে ফেললেন, ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরের অনেক আগে থেকেই তিনি মুশফিকুর রহিমকে চিনতেন। তার সম্পর্কে জানতেন।
এছাড়া টেস্টে মুশফিকুর রহিমের প্রথম ফিফটি (৮০) হাঁকানোর পথে সঙ্গী ছিলেন আশরাফুল। মুশফিকের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির সময়ও আশরাফুল ছিলেন তার পার্টনার। মুশফিকের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের সেই সব স্মরণীয় ঘটনা এখনো আশরাফুলের স্মৃতিতে ভাস্বর।
জাগো নিউজের সাথে রোববার দুপুরের আলাপে মুশফিকুর রহিমের সেই সব স্মৃতি রোমন্থন করে আশরাফুল বলেন, ‘আমি জাতীয় দলে ঢোকার কয়েক বছর পরই মুশফিককে চিনতে শুরু করি। ২০০১ সালে টিম বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট ট্যুর থেকে আমি জাতীয় দলের প্রায় নিয়মিত সদস্য। মুশফিক আসছিল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে, সম্ভবত ২০০৪-এর শেষ দিকে। সেই বিশ্বকাপে সাকিবের বেশি নাম হয়েছিল। আর মুশফিক ছিলেন বাংলাদেশ যুব দলের ক্যাপ্টেন। ব্যাটার কাম উইকেটকিপার, সেটাও আমরা জানতাম। এরপর তো ২০০৪ সালে আমরা যখন শ্রীলঙ্কার সাথে টেস্ট ম্যাচ খেলি, তখন মুশফিককে খেলানো হয়নি মনে হয়।’
‘তারপর ২০০৫-এ আমরা ইংল্যান্ড ট্যুরে গেলাম। মুশফিক ছিল সে সফরে। ইংল্যান্ড যাওয়ার পর প্র্যাকটিস ম্যাচে একটিতে সেঞ্চুরি করলো, অন্যটিতে আশির ঘরে আর আরেক ম্যাচে ৬০ করলো। আর তাতেই সবার নজরে পড়লো।’
আশরাফুলের মূল্যায়ন, ‘সেই আন্ডার নাইন্টিন থেকেই তার ব্যাটিং টেকনিক ও স্কিল ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে কিপার মুশফিক ছিল মাঝারি মানের, কাজ চালানোর মতো। তবে ব্যাটিং ছিল অসাধারণ। পাইলট ভাই ছিলেন মেইন কিপার। তাই মুশফিককে ব্যাকআপ কিপার কাম ব্যাটার হিসেবেই নেওয়া হয়েছিল। অসাধারণ খেলাতে অভিষেক হয়ে গেল লর্ডসে।’
‘তারপর সিঁড়ি থেকে পড়ে তার পা মচকে যাওয়ায় ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে ছিল না। হয়তো থাকতে পারতো। ইনজুরড হওয়ার পর ফিরে আসলো। এরপর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে পাইলট ভাইকে বাদ দিয়ে মুশফিককে নেওয়া হলো। এটা ছিল বিগ ডিসিশন।’
‘ফারুক ভাই (তৎকালীন প্রধান নির্বাচক, বর্তমান বিসিবি সহ-সভাপতি) দারুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এবং সে প্রথম ম্যাচে ভারতের সাথে নেমেই ফিফটি করলো। সাথে অপর ২ তরুণ তামিম ও সাকিবও ফিফটি করেছিল। তারপর শ্রীলঙ্কা ট্যুরে মুশফিক আমাদের সাথে গেল। তখন আমি ক্যাপ্টেন। ওই সিরিজে মুশফিক ছিল। প্রথম টেস্ট ম্যাচ পাইলট ভাই খেলেছিলেন। আমরা খুব বাজেভাবে সেই টেস্ট হারার পর পাইলট ভাই নিজে এসে আমাকে বললেন-আশরাফুল, আমি তোর বড় ভাই বলেই যে আমাকে খেলাবি, তা নয়। তোর যদি মনে হয় ব্যাটার খেলাবি, তাহলে অস্বস্তি বোধ করার কিছু নেই। মুশফিককে খেলাতে পারিস।’
‘তিনি নিজ থেকে বলাতে আমি সাহস পেয়েছিলাম। মুশফিক খেললো। এবং আমার সাথে একটা বড় জুটিও করলো দ্বিতীয় ইনিংসে। আমি করেছিলাম ১২৯ নটআউট, মুশফিক করেছিল ৮২। ওই যে মুশফিকের টেস্ট ক্রিকেটে সেটেল্ড হয়ে যাওয়া। পাইলট ভাইয়ের সেটাই ছিল শেষ ম্যাচ।’
‘পরে আমার ক্যাপ্টেন্সিতে একটা-দুইটা ওয়ানডে সিরিজে বিশ্রাম দিয়েছিলাম। পরে সে বিকেএসপির হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেললো। ৬০০+ রান করলো। পরে আবার দলে ঢুকলো। তারপর সে অধিনায়ক হলো। পরে গল টেস্টে আমার সাথে ২৬৭ রানের বিরাট জুটি তৈরি করলো। আমি ১৯০ রানে আউট হলেও মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরি করলো, যা ছিল টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল হান্ড্রেড।’
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম