প্রায় সবার জানা, মুশফিকুর রহিম খুব আবেগপ্রবণ মানুষ। ক্রিকেট মাঠে সেভাবে নিজের আবেগের প্রকাশ না ঘটালেও টিম হোটেল ও ড্রেসিংরুমে মুশফিকের ইমোশনাল হওয়ার নজির আছে ভুরি ভুরি। শুনে হয়তো অবাক হবেন, আজকের দেশসেরা টেস্ট ব্যাটার মুশফিকের সেই ইমোশনাল রূপ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তার দ্বিতীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল।
আজ রোববার মুশফিককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আশরাফুল বলে ওঠেন, ‘জানেন, মুশফিককে যখন আমার প্রথম ডেপুটি মানে ভাইস-ক্যাপ্টেন করা হলো, তখন রীতিমত ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কারণ জানতাম সে খুব ইমোশনাল একটা ছেলে। রান করতে না পারলে আপসেট হয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখতো। এরকম মেন্টালিটির মানুষকে যখন ভাইস-ক্যাপ্টেন দেওয়া হলো, তখন আমি ভীত ছিলাম। কিন্তু মুশফিক পরে ওভারকাম করলো। সে টেস্ট ক্যাপ্টেন হলো। তার ক্যাপ্টেন্সিতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আর দেশের বাইরে শ্রীলঙ্কাকে টেস্টে হারালো বাংলাদেশ। ওই সিরিজে মুশফিকের কন্ট্রিবিউশনও ছিল প্রচুর।’
‘শুরুর দিকে যে মুশফিক ছিল, অধিনায়ক হয়েই সে মুশফিক পাল্টে গেল। সে পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে অ্যাডজাস্ট করেছে। আর তার ডিসিপ্লিন ছিল দুর্দান্ত। আমার ২০ বছরের বেশি ক্যারিয়ারে এরকম ক্রিকেটার আমি দেখিনি। প্রতি রাতে ১০টায় ঘুমিয়ে যাওয়া আর ফজরের নামাজের সময় উঠে নামাজ পড়ে প্র্যাকটিসে চলে যাওয়া। আমার মনে হয় না যে, তার একদিনও ফজরের নামাজ মিস হয়েছে। আমাদের দেশের ক্রিকেটে রোল মডেল আসলে মুশফিকের হওয়া উচিত। তিনি সবার আদর্শ হতে পারেন। সবাই অনুসরণ করতে পারে মুশফিককে’-যোগ করেন আশরাফুল।
মুশফিককে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন? ব্যাটার মুশফিক কি সবার সেরা? আশরাফুলের ব্যাখ্যা, ‘নিঃসন্দেহে আমাদের অন্যতম সেরা ব্যাটার মুশফিক। তবে আমার মনে হয়, এই জায়গায় সবার ওপরে তামিম। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটার আমার চোখে তামিম। সব বাঘা বাঘা বোলারদের বল ফেস করেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ১৫ হাজার রান করার পথে অনেক বড় বড় ফাস্ট বোলারকে ফেস করে তাদের যথেষ্ট আস্থা-আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলেছে তামিম। তাই আমার চোখে তামিম হলো এক নম্বর ব্যাটার।’
তাহলে মুশফিককে কোথায় রাখবেন? আশরাফুলের জবাব, ‘আমার চোখে মুশফিক হলো রোল মডেল। শৃঙ্খলা, খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে মুশফিক ব্যতিক্রম। আমার সাথে টেস্ট আর ওয়ানডেতে তার অনেকগুলো ভালো ও বড় বড় পার্টনারশিপ আছে। সেগুলোয় কিছু অজানা গল্পও আছে। এই যেমন ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ৮৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলার পথে আমি হয়তো ৪৭ রানেই আউট হয়ে সাজঘরে ফিরতে পারতাম। সে ম্যাচে আমাকে দারুণ স্যাক্রিফাইস করেছিল মুশফিক। নিশ্চিত রান আউট হতে যাচ্ছিলাম। সিঙ্গেল নিতে গিয়ে আমি প্রান্ত বদলে ওর প্রান্তে চলে এসে দেখি মুশফিক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে। তখন সে শেষ মুহূর্তে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আমাকে স্যাক্রিফাইস করে অপর প্রান্তে যেতে গিয়ে রান আউট হয়েছিল।’
দেশের হয়ে মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি এবং তার ১৯০ রানে আউট হওয়ার সেই স্মৃতি হাতড়ে আশরাফুল বলেন, ‘টেস্টে অনেকগুলো বড় পার্টনারশিপ আছে (মুশফিকের সাথে)। কিন্তু তেমন কোনো কথা বলেনি। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২০১৩ সালে আমি যখন ১৯০-এ আউট হয়ে গেলাম, তখনও অপর প্রান্ত থেকে একটি শব্দও করেনি। তবে আফসোসে পুড়েছিল শুধু।’
এআরবি/এমএমআর/এমএস