বছর শেষের আগে অভিনেত্রী সোনম কাপুর ছবির মাধ্যমে জানালেন-তিনি আবারও মা হতে চলেছেন। তার বয়স এখন ৪০। শুধু সোনম নন, বলিউডের ক্যাটরিনা কাইফ, দীপিকা পাড়ুকোন, বিপাশা বসুসহ আরও অনেকে ৪০-এ এসে মাতৃত্ব গ্রহণ করছেন। তাদের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে একদিকে অভিনন্দন, অন্যদিকে প্রশ্ন-বেশি বয়সে মা হওয়া কি সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ?
আজকের সময়ের অনেক নারীই কর্মজীবনে স্থির হয়ে, নিজের অবস্থান তৈরি করে তবেই মাতৃত্ব নিতে চান। কিন্তু বাস্তবতা হলো-মাতৃত্ব শুধুই ইচ্ছার ব্যাপার নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীর শরীরে ডিম্বাণুর সংখ্যা কমে, গুণগত মানও নষ্ট হতে থাকে। ৩০-এর পর থেকেই এই পরিবর্তন শুরু হয়, আর ৩৫-এর পর গর্ভধারণের সম্ভাবনা দ্রুত কমে যায়। গর্ভ থাকলেও হরমোনের কারণে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে। আবার ডিম্বাণুর গুণমান খারাপ হলে শিশুর জন্মগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। মায়ের শরীরেও বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবুও চিকিৎসকেরা বলছেন, এখনকার চিকিৎসাবিজ্ঞান এই ঝুঁকিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং নিয়মিত মেডিকেল নজরদারির মধ্য দিয়ে ৪০-এর পরেও অনেক নারী সুস্থভাবে মা হচ্ছেন।
ভারতীয় চিকিৎসক নিলম সুরি বলেন, দেরিতে মা হওয়ার প্রবণতা এখনকার জীবনযাত্রার সঙ্গে বেশ স্বাভাবিক একটি পরিবর্তন। আগেভাগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে বয়স আর তত বড় বাধা নয়।
কিন্তু ঝুঁকি নেই-এ কথাও বলা যাবে না। কারণ বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও জরায়ুর বয়স শরীরের বয়সের তুলনায় দ্রুত বাড়ে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ওভারিয়ান এজিং’। দূষণ, খাবারে ভেজাল, অনিয়মিত জীবনযাপন, স্থূলতা-সব মিলিয়ে জরায়ুর কার্যক্ষমতা আগেই কমে যায়।
এজন্য অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা আগেভাগে করা ভালো। ঋতুস্রাব হচ্ছে মানেই ডিম্বাণুর গুণমান ঠিক আছে-এ ধারণাটি ভুল। এক বছর চেষ্টা করেও গর্ভধারণ না হলে সমস্যা চিহ্নিত করা জরুরি। প্রয়োজনে ল্যাপারোস্কোপি, আইইউআই বা আইভিএফ পর্যন্ত যেতে হয়। সব চিকিৎসা সব নারীর ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজও করে না।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সঠিক পরিকল্পনা এবং চিকিৎসকের কড়া নজরদারিতে থাকলে বেশি বয়সে মা হওয়া এখন ততটাও ঝুঁকিপূর্ণ নয়। বেশি বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা এখন নতুন বিষয় নয়।
চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ মতো সাবধানতা অবলম্বন করে এখন অনেক নারীরা ৪০ বছরে এসেও অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরিকল্পনা করছেন, এবং তারা ইতিবাচক ফলও পাচ্ছেন। তবে ২০ বছর বা ৩০ বছরের তুলনায় ৪০ বছরে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঝুঁকিও বেশি, তবু সঠিক পরিকল্পনা, রুটিন চেকআপ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে মা ও সন্তানের শারীরিক সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
মা হতে চাইলে যা করতে হবে-
৪০-এর পর গর্ভধারণ করতে চাইলে আগে জরায়ু ও ডিম্বাণুর অবস্থা জেনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলট্রাসাউন্ড জানিয়ে দেয় জরায়ু ও ডিম্বাণুর বর্তমান পরিস্থিতি, আর এএমএইচ পরীক্ষা জানায় ডিম্বাণু কতটুকু অবশিষ্ট আছে। গর্ভধারণের আগে প্রি-প্রেগন্যান্সি কাউন্সেলিং করলে মা ও শিশু দুজনের ঝুঁকিই কমে যায়।
থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা, রুবেলা টিকা, এন্ডোমেট্রিওসিস বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের চিকিৎসা-সবকিছু আগেই ঠিক করে নেওয়া ভালো। ৩৯ বছর পেরোলেই এনআইপিটি পরীক্ষা করা হয়, যাতে শিশুর ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি জানা যায়।
যারা শুরু থেকেই দেরিতে মা হওয়ার পরিকল্পনা করেন, তারা অনেকেই ডিম্বাণু সংরক্ষণের পথ বেছে নিচ্ছেন। ৩০-৩২ বছর বয়সে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করলে ৩৮-৪০ বছরেও সফলভাবে গর্ভধারণ করা যায়। স্বামীর শুক্রাণুর গুণগত মান কম থাকলেও এই পদ্ধতি কার্যকর। ফার্টিলিটি চিকিৎসার উন্নতি আজ বহু নারীর জন্য নতুন সম্ভাবনা খুলে দিয়েছে।
সব মিলিয়ে, ৪০-এ মা হওয়া কঠিন-কিন্তু অসম্ভব নয়। সচেতনতা, চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং মানসিক প্রস্তুতি-এই চারটিই বয়সের সীমাবদ্ধতাকে অনেকটাই পেছনে ফেলে দেয়। সোনম কাপুরদের মতো আরও অনেক নারী প্রমাণ করছেন-মাতৃত্বের সময় ঠিক করে দেয় জীবন, কিন্তু তা বেছে নেওয়ার সাহস ও প্রস্তুতি ঠিক করে দেয় নারীর নিজের সিদ্ধান্তই।
সূত্র: হেলথলাইন, হিন্দুস্তান টাইমস
আরও পড়ুন: নীরবে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে লিভার সিরোসিসডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া, কীভাবে বুঝবেন
এসএকেওয়াই/এমএস