তানজিদ শুভ্র
টাকার বিনিময়ে নয়, একটি সুন্দর পোর্ট্রেট আঁকিয়ে নিতে আপনাকে দিতে হবে কেবল একটি প্রতিশ্রুতি। কাগজে লিখে পাঠাতে হবে তিনটি শপথের কথা। আসন্ন থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং শীতের প্রকোপকে কেন্দ্র করে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এমনই এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন শিল্পী আশরাফুল ইসলাম। উৎসবের আনন্দ যেন অন্যের বিষাদের কারণ না হয়, সেই বার্তাই তিনি পৌঁছে দিতে চাইছেন তার তুলির আঁচড়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইলে তিনি একটি ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি আগ্রহীদের পোর্ট্রেট এঁকে দেবেন। তবে এর জন্য পালন করতে হবে কিছু শর্ত। একটি সাদা অফসেট কাগজে এক ইঞ্চি মার্জিন রেখে নিজ হাতে লিখতে হবে তিনটি শপথ—১. আসন্ন থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস ওড়াবো না এবং পরিচিতদের নিরুৎসাহিত করবো। ২. আতশবাজি ফোটানো ও উচ্চ শব্দে গান বাজানো থেকে বিরত থাকবো। ৩. শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষ বা প্রাণীর পাশে সাধ্যমতো দাঁড়াবো। লেখাটির নিচে স্বাক্ষর ও তারিখ দিয়ে ছবি তুলে পাঠালেই শিল্পী তার নিপুণ হাতে অলংকরণ করে দেবেন সেই ব্যক্তির পোর্ট্রেট। উৎসবের নামে বিশৃঙ্খলা রোধ এবং মানবিকতার ডাক পৌঁছে দিতেই তার এই শিল্পিত প্রতিবাদ।
উদ্যোক্তা আশরাফুল ইসলাম পেশায় একজন শিক্ষক। সত্তায় তিনি পুরোদস্তুর শিল্পী। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপচিত্র বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এই তরুণ বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। তবে রঙের ভুবন থেকে নিজেকে দূরে রাখেননি। তিনি মূলত একজন প্রচ্ছদশিল্পী। বইমেলা কিংবা মেলার বাইরে প্রকাশিত বহু বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকে তিনি এরই মধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।
আরও পড়ুনমামদানির বিজয়ে বাংলাদেশিরা কী ভাবছেন? ফেসবুকে ‘লাল কয়েন’ বিক্রি, প্রতারণা নয় তো?
আশরাফুল ইসলামের কাজের ধরন কিছুটা ভিন্ন। তিনি প্রথাগত এবং আধুনিক উভয় মাধ্যমেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেও প্রচ্ছদ আঁকাকে তিনি দেখেন আত্মার খোরাক হিসেবে। নিজের কাজ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে তিনি বেছে নিয়েছেন অনলাইন জগতকে।
এবারের থার্টি ফার্স্ট নাইট ও শীত উপলক্ষে তার এই ‘পোর্ট্রেটের বিনিময়ে মানবিকতা’র উদ্যোগ নেটিজেনদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার পোস্টের মন্তব্যের ঘরে লেখক ডা. শতাব্দী ঘোষ লিখেছেন, ‘অনেক সুন্দর উদ্যোগ নিয়েছেন। খুব ভালো লাগল।’ শিমুল মন্ডল নামে আরেক নেটিজেন লিখেছেন, ‘অসাধারণ ভাবনা ভাই। পোর্ট্রেট লাগবে না, আমি এগুলো করবো অবশ্যই।’
এর আগে তিনি বৃক্ষরোপণের বিনিময়ে শুভানুধ্যায়ীদের ডিজাইন উপহার দিয়েও বেশ সাড়া পেয়েছিলেন। শিল্প কেবল সৌন্দর্যের চর্চা নয়, শিল্প হতে পারে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার—আশরাফুল ইসলামের এই উদ্যোগ যেন সেটাই প্রমাণ করে।
এসইউ