‘ভূমিকম্পের ব্যাপারে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ভুল ধারণা দূর করে এখনই বাস্তবসম্মত প্রস্তুতি গড়ে তুলতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করতে হবে। আর জরুরি সেবা পৌঁছানোর জন্য সরু সড়ক প্রশস্ত করা প্রয়োজন। ভূমিকম্প নিয়ে ভয় নয়, এখন প্রয়োজন দ্রুত পদক্ষেপ।’
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘ভূমিকম্প: বাস্তবতা, ধারণা ও সচেতনতার কৌশল’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (আইএবি) এই বৈঠকের আয়োজন করে।
ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ এম আহমেদের সভাপতিত্বে আইএবি সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বক্তব্য দেন প্রখ্যাত পুর প্রকৌশলী ও বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. শামীম জেড বসুনিয়া, বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও লিডিং ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য স্থপতি অধ্যাপক ড. কাজী আজিজুল মাওলা, স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি আসিফুর রহমান ভূঁইয়া, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন হায়দার প্রমুখ।
এসময় অধ্যাপক ড. শামীম জেড বসুনিয়া বলেন, অভিজ্ঞ স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়াররা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এবং ভবন নির্মাণ যথাযথভাবে তদারকি করলে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি তাড়াহুড়ো না করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা না গেলেও ক্ষতি কমানো সম্ভব। ভবন অনুমোদন প্রক্রিয়ায় তদারকি না থাকার বিষয়টি তিনি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন। অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি, গ্যাস লিকেজ, ভুল নির্মাণ, রেগুলেটরি অথরিটি গঠন, ব্লক ডেভেলপমেন্ট ও টিডিআর বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।
অধ্যাপক ড. রাকিব আহসান বলেন, সব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ভূমিকম্প-সহনশীল ডিজাইনে দক্ষ নন। সিপিডি এবং ট্রেনিংয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি স্থপতি ও প্রকৌশলীর সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
আইএবি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির অ-বৈজ্ঞানিক ভূমিকম্প পূর্বাভাস ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, ভয় নয়, এখন প্রয়োজন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করা। জরুরি সেবা পৌঁছানোর জন্য সরু সড়ক প্রশস্ত করা। হাসপাতাল, সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অবকাঠামো সংস্কার ও শক্তিশালী করতে হবে। আলগা ফ্রি-স্ট্যান্ডিং আসবাবপত্র দেয়ালে সুরক্ষিতভাবে বেঁধে রাখতে হবে। দক্ষ পেশাজীবীদের মাধ্যমে নতুন ভবন নির্মাণের আগে যথাযথ মাটির পরীক্ষা নিশ্চিত করা ও জরুরি বহির্গমনপথ স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
ড.আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, পোস্ট ডিজাস্টার নিয়ে কাজ করলে আমরা সরকারকে অনেক কিছু রেকমেন্ড করতে পারবো, আমরা দেশকে রক্ষা করতে চাই, দেশের সবকিছু রক্ষা করতে চাই, একসঙ্গে বাঁচতে চাই।
অনুষ্ঠানে প্রায় ২০ জনের মতো স্থপতি বক্তব্য দেন। তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানান আয়োজকরা।
ইএইচটি/ইএ