শ্রীলঙ্কার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত তিন বেডরুম হোমস্টের মালিক হেরাথ গেদারা রোহান অনিল কুমারার জন্য সবচেয়ে ব্যস্ত মৌসুম নভেম্বর থেকে জানুয়ারি। কারণ চা-বাগান, ঐতিহাসিক স্থান আর শান্ত গ্রামগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় থাকে সেখানে।
কিন্তু গত সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া দ্বীপজুড়ে তাণ্ডব চালানোর পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। প্রায় ৫০০ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই দুর্যোগে কুমারা এখন একটি ত্রাণকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন—কবে আবার নিজের ব্যবসা গুছিয়ে নিতে পারবেন, তা নিশ্চিত নন।
তার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটি আগে প্রতি রাতে ৩০ ডলারের বেশি আয় এনে দিত, যা দিয়ে পরিবারটি ভালোভাবেই চলতো। কিন্তু এখন তাকে ডিসেম্বর ও জানুয়ারির সব বুকিং বাতিল করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এখনো ফোন করে অনেকে জানতে চাইছে কক্ষ খালি কি না, কিন্তু আমরা কাউকেই নিতে পারছি না। কবে বাড়ি মেরামত করা যাবে, কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব—কিছুই জানি না।
এই পরিস্থিতি তুলে ধরছে শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাতের ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতা। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এই খাত মূলত ছোট অপারেটরদের ওপরই নির্ভরশীল, যা জিডিপির প্রায় ৪ শতাংশ।
২০২২ সালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পর্যটন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার ব্যাপক ক্ষতি আবারও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ঘূর্ণিঝড়টি দেশের ২২ মিলিয়ন মানুষের প্রায় ১০ শতাংশ-এর ওপর প্রভাব ফেলেছে, হাজারো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, মারা গেছেন অন্তত ৪৮৬ জন, নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক, বিদ্যুৎলাইন, টেলিকম সেবা এবং কৃষি খাত।
এ বছর মধ্য-নভেম্বর পর্যন্ত পর্যটক আগমন দুই মিলিয়ন ছাড়িয়েছে, আর সরকার আশা করছে বছরের শেষে এই সংখ্যা ২.৬ মিলিয়ন হবে—যা কোভিড-পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ।
সরকার আটকে পড়া পর্যটকদের হেলিকপ্টারে সরিয়ে নিয়েছে, ভিসার অতিরিক্ত ফি মওকুফ করেছে এবং ফ্লাইট পরিবর্তন বিনা খরচে করার সুযোগ দিয়েছে। পর্যটনখাতও ভিসা-মুক্ত দেশ বাড়ানোর দাবি তুলেছে এবং পর্যটকদের আশ্বস্ত করতে নতুন সামাজিকমাধ্যম প্রচারণা চালাচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স
এমএসএম