সন্ধ্যার পর প্রযোজনা সংস্থার অফিসটা বসতবাড়ি হয়ে উঠতে শুরু করলো। সারাদিনের ব্যস্ততার পর সবাই গা ছেড়ে দিয়েছিলেন উৎসবের আবহে। একে একে আসতে শুরু করেছেন অতিথিরা। অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলেন ‘হাওয়া’ সিনেমার নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন।
যাদের মনে ছিল না, ‘হাওয়া’ অভিনেত্রীর পোস্ট দেখে তাদেরও মনে পড়ে গেল। দিনে-দুপুরে পরিচালকের ছবি পোস্ট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তুষি। লিখেছিলেন, ‘নবীন কিশোর, তোমাকে আমার তোমার বয়সী সবকিছু দিতে বড় সাধ হয় .. শুভ জন্মদিন।’ সুমনের নির্দেশনায় ‘হাওয়া’য় অভিনয় করা তুষি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার ক্যারিয়ার এখন সম্ভাবনাময়।
ফেসকার্ডের অফিসে সুমনের জন্মদিনের পার্টি। নিকটজনদের নিয়ে একটা সন্ধ্যা-রাত উদযাপন করবেন সুমন, এই ছিল আয়োজন। জন্মদিন তার কাছে উৎসবের উপলক্ষ নয়। বরং মানুষকে কাছে পাওয়ার অজুহাত। তাই অফিসেই ছোট্ট পরিসরে কয়েকজন কাছের মানুষকে আসতে বলেছেন। কম আলো, বেশি আধারে দেখা যাচ্ছিল কতগুলো অল্পচেনা আর ঘুরে-ফিরে বারবার দেখা হওয়া মুখ।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামানকে দেখা গেল। সুমনের দীর্ঘদিনের সহযাত্রী। হাসিমুখে তিনি সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন কলকাতা থেকে বেড়াতে আসা লেখক রাজীব করের সঙ্গে। রাতের দিকে হাজির হয় মেঘদলের সদস্যরা। তখনই বোঝা যায়, যে কোনো সময় শুরু হবে গান।
‘হাওয়া’র অন্যতম অভিনেতা সোহেল মণ্ডলকে দেখা যায়। সারা অফিস সুমনকে হন্য হয়ে খুঁজতে থাকেন তিনি। ছবির নির্বাহী প্রযোজক শিমুল বিশ্বাস কিচেনের দিকে ইঙ্গিত করতেই সোহেল ঢুকে পড়েন সেখানে। সালাদ বানানো অবস্থায় সুমনকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানান। ততক্ষণে বিরিয়ানি রান্না হয়ে গেছে। খেতে বসলে টের পাওয়া যায়, সিনেমার মতো ফেসকার্ডের বিরিয়ানিটাও মজার। সবাই ঠিকঠাক তুলে নিচ্ছেন কি না সেটার দেখভাল করছিলেন তুষি, ঠিক যেন বাড়ির দায়িত্ববান গৃহিনী!
খাওয়া-দাওয়া পর্ব শেষে এক চিলতে বিরতি, তারপর শুরু হয় গান। ‘হাওয়া’ সিনেমার ‘এ হাওয়া’ গানটাই ধরলেন শিবু কুমার শিল। পিয়ানো বাজাচ্ছিলেন রাশিদ শরীফ শোয়েব, স্যাক্সোফোনে সৌরভ সরকার। কখনও দলের গান, কখনও লালনের। একপর্যায়ে চোখবুঁজে কাঁদতে দেখা যায় সুমনকে। বন্ধুরা তখন গাইছিল ‘বধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায় বিনা কারণে ...’। চিত্রকলায় পড়াশোনা করা সুমন জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেছেন এই গানের পেছনে। কিন্তু সামনে থেকে মানুষ জানে, সুমন একজন চলচ্চিত্রকার। একটা জীবন ছোটপর্দার জন্য নাটক বানিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন। বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন তারও চেয়ে বেশি। তার সিনেমা সংখ্যা এখনও ১!
মধ্যরাতে যে যার ধ্যানে মগ্ন হলে সুমন জানান, তার দুনম্বর সিনেমা ‘রইদ’ আসছে। জয়া আহসানকে সঙ্গে নিয়ে যে ছবি বানানোর কথা ছিল অনেক বছর আগে, তা হঠাৎ থমকে গিয়েছিল। তারপর আবারও শুরু হয় ছবির কাজ। শেষও হয়েছে। অভিনেত্রী ও প্রযোজক জয়া সরে যাওয়ার পর সেখানে অভিনেত্রী হিসেবে যুক্ত হন নাজিফা তুষি। নতুন বছরে ‘রইদ’ মুক্তি পাবে। তারপর মুক্তি পাবে অনেক দিনের আটকে রাখা দীর্ঘশ্বাস।
এমআই/আরএমডি