দেশজুড়ে

৮০ বছর আগের এক আনার মাখন টোস্টের দাম এখন ৫০ টাকা

দুটি মচমচে টোস্ট। তার ওপরে মাখন ও চিনি। ব্যস! এটুকুতেই হয়ে যায় মজাদার ‌‘মাখন টোস্ট’। সেই বিখ্যাত খাবার খেতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মাদারীপুরের মনষা ভান্ডারে। দীর্ঘ ৮০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে তিন প্রজন্ম। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও চাহিদা থাকে এই মাখন টোস্টের।

মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া বাজার এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত মাখন টোস্টের দোকান। এই দোকানের আয়েই চলে ছেলের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ। মাসে তিন লাখ টাকার বেচাকেনা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুরের চরমুগরিয়া এলাকাটি একসময় জাঁকজমক পাটের ব্যবসা ছিল। পাশের কুমার নদ দিয়ে বড় বড় জাহাজ চলতো। সেই জাহাজে পাটবোঝাই করে নেওয়া হতো বিদেশে। তাই এই এলাকাটি ‘চরমুগরিয়া বন্দর’ নামেও পরিচিত। প্রায় ৮০ বছর আগে বন্দরকে কেন্দ্র করে মৃত ভীম ঘোষ নিজ বাড়ির বারান্দায় নিজেই মাখন তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। দিনে দিনে বিক্রি বাড়তে থাকে। টোস্টের ওপর নিজের হাতে বানানো মাখন ও চিনি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

অল্প কিছুদিনেই মধ্যেই এর স্বাদের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভীম ঘোষ মারা যাওয়ার পর তার ছেলে কার্তিক ঘোষ ব্যবসার হাল ধরেন। দোকানটির নাম দেয়া হয় ‘মনষা ভান্ডার’। রাস্তার সামনের অংশ দোকান আর পেছনে তারা বসবাস করেন। বর্তমানে ব্যবসাটি কার্তিক ঘোষ, তার ছেলে তুষার ঘোষ ও তারক ঘোষ দেখাশোনা করছেন।

দুটি টোস্টের সঙ্গে মাখন ও চিনি মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। দাম রাখা হয় ৫০ টাকা। শুরুতে মাখন টোস্টের দাম রাখা হতো এক আনা পয়সা। এখন তার দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা।

অর্ডার দিয়ে টোস্ট বানানো হয়। মাখন বাড়িতেই নিজের হাতেই তৈরি করেন কার্তিক ঘোষ ও তার পরিবারের লোকজন। অনেকেই শুধু মাখনও কিনে থাকেন। প্রতিকেজি মাখন এক হাজার টাকা। এছাড়াও নিজেদের তৈরি ঘিও বিক্রি করা হয়। দাম প্রতিকেজি এক হাজার ৬০০ টাকা। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। তাতে মাসে গড়ে বিক্রি হয় তিন লাখ টাকা।

মাদারীপুরের কালীরবাজার এলাকা থেকে আসা সুলিশ কৃষ্ণ দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে এই দোকান থেকে মাখন কিনি। এই দোকানে এসে নিজে খাই। যাওয়ার সময় পরিবারের জন্য নিয়ে যায়। এটি মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই খাবারের সুনাম আছে।’

মাখন টোস্ট খেতে আসা নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমি প্রায় সময় এখানে খেতে আসি। অনেক মজার খাবার। শুধু আমি না, মাঝেমধ্যে পরিবার নিয়েও খেতে আসি।’

কথা হয় মনষা ভান্ডারের মালিক কার্তিক ঘোষের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে আমার বাবা এই ব্যবসা করতেন। বাবার পরে আমি করি, আমার ছেলেও করে। বাবা এই টোস্ট এক আনায় বিক্রি করতেন। এখন এর দাম ৫০ টাকা। ৮০ বছর ধরে এই ব্যবসা করে আসছি। মাদারীপুরে এমন দোকান আর একটিও নেই।’

তিনি বলেন, ‘এটি পুরোনো দোকান হওয়ায় এখানে শুধু মাদারীপুর জেলার নয়, অন্য জেলা থেকেও মানুষজন খেতে আসে। যাওয়ার সময় নিয়েও যায়। মাদারীপুরের উচ্চ পর্যায় ও প্রশাসনের লোকজনও আমাদের কাছ থেকে অর্ডার দিয়ে মাখন টোস্ট নিয়ে থাকেন।’

মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, চরমুগরিয়ার মাখন টোস্ট আমাদের মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে একটি। এটি অনেক পুরোনো ও মজাদার খাবার।

এসআর/এমএস