আজ ৬ ডিসেম্বর, লালমনিরহাট মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিগামী মানুষের দুর্বার প্রতিরোধের মুখে লালমনিরহাট জেলা পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে আজকের এই দিনেই লালমনিরহাটের আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা।
১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী লালমনিরহাট দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে কোণঠাসা হতে থাকে তারা। বড়খাতা, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারীতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাক বাহিনীর পতন ঘটতে থাকে।
এক পর্যায়ে চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধারা লালমনিরহাট শহর চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে অবস্থা বেগতিক দেখে হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। ৬ ডিসেম্বর ভোর ৬টায় লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাক সেনা, রাজাকার, আলবদর ও তাদের দোসররা দুটি স্পেশাল ট্রেনে করে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পালিয়ে যায়। তাদের পলায়নের মধ্য দিয়েই লালমনিরহাট জেলা শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৬ নম্বর সেক্টরটি ছিল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে। এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর এম খাদেমুল বাশার। তার নেতৃত্বে এই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন।
লালমনিরহাট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার প্রায় দুই হাজার মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন ৩১ বীর শহীদ।
দিবসটি উপলক্ষে লালমনিরহাটের একমাত্র বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে উত্তাল সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন।
মহসীন ইসলাম শাওন/এএইচ/জেআইএম