জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী ১১৪ জন অজ্ঞাত শহীদের পরিচয় শনাক্তে মরদেহ তোলা শুরু করেছে সিআইডি।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাত এই শহীদদের মরদেহ তোলা শুরু হয়।
এসময় সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ উপস্থিত থেকে মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করেন।
উত্তোলন কার্যক্রম শুরুর আগে এক সংবাদ সন্মেলনে মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আনাসের মতো যারা বুকের রক্ত ঢেলে দেশের জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির কাছে আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে একই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন।
আরও পড়ুনআন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনেই শহীদদের মরদেহ তোলা হবে: সিআইডি প্রধানগণঅভ্যুত্থানে শহীদ ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্তে মরদেহ তোলা হবে আজ
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল, মিনেসোটা প্রোটোকল অনুসরণ করে মরদেহ উত্তোলন, পোস্টমর্টেম, ডিএনএ স্যাম্পলিংসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হবে। আমরা সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব স্টেকহোল্ডারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
সিআইডি প্রধান বলেন, আবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ১১৪টি কবর চিহ্নিত হয়েছে, যা বাস্তবে কমবেশি হতে পারে। মরদেহ উত্তোলনের পর পোস্টমর্টেম, বোন স্যাম্পল/টিস্যু সংগ্রহ, ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে আবার পুনঃদাফন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিচয় শনাক্তের পর কেউ যদি লাশ গ্রহণ করতে চান তাহলে গ্রহণ করতে পারবেন।
আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ জনের স্বজন আবেদন করেছেন, আরও কেউ থাকলে সিআইডিতে যোগাযোগ করতে পারবেন। সিআইডি হটলাইনে যোগাযোগ করলে স্বজনদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে।
আমরা জানি না কোন কবরে কে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই সময় কত লাগবে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই প্রক্রিয়ায় সব শহীদের পরিচয় আমরা বের করতে পারবো।
সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে সিআইডি প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী মরদেহের কোনো ছবি বা সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। এটি অত্যন্ত সম্মানজনক ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট কাজ। আগের মতোই আপনাদের সহযোগিতা চাই।
শহীদদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা, ভাই-বোন বছর ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন তাদের আপনজনদের পরিচয় জানার জন্য। আমরা এই বেদনার দায় থেকে দেশকে মুক্ত করতে চাই।
শেষে তিনি সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা, চিকিৎসক, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, ডিএমপি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এসময় ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ইউএনএইচআর) আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, আমি গত তিন মাস ধরে সিআইডির সঙ্গে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক মানের এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি এই কাজ আন্তর্জাতিক ফরেন্সিক মানদণ্ড অনুসরণ করে করা হবে। আন্তর্জাতিক রুলস ফলো করে লোকাল সংস্থাকে (সিআইডি) সহায়তা করা হবে।
কেআর/এএমএ/জেআইএম