বর্তমানে ব্যস্ত জীবনযাত্রা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপের কারণে আমাদের হজমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতা বেড়ে চলেছে। এসব সমস্যার সমাধানে মানুষ ক্রমেই প্রাকৃতিক প্রতিকারকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এর মধ্যে সোনা পাতা গুঁড়া অন্যতম। আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত এই উপাদান বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্ত্র পরিষ্কারের জন্য সুপরিচিত।
সোনা পাতা দেখতে অনেকটা মেহেদি পাতার মতো। এটি ক্যাসিয়া অ্যাঙ্গাস্টিফোলিয়া, যা ভারতীয় সেনা নামেও পরিচিত। শুকনা অবস্থায় পাতার রঙ হালকা হলুদ সোনালি। এতে খনিজ, লবণ, ক্যালসিয়াম এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে। মূলত এটি জোলাপ বা রেচক হিসেবে কাজ করে, যা হজম প্রক্রিয়া এবং অন্ত্রের কার্যক্রমকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
সোনা পাতা খেলে যে যে উপকার পাবেন- ১. অন্ত্রের কার্যক্রম উন্নত করাসোনা পাতার অন্যতম প্রধান উপকারিতা হলো এটি অন্ত্রের পেশীগুলোকে কার্যকরী করে তোলে। ফলে পেটের মধ্যে জমে থাকা বর্জ্য সহজে বের হয়। এটি অন্ত্রের সঙ্কোচন ও প্রসারণকে সমন্বয় করে।
২. কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রাকৃতিক সমাধানসোনা পাতার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সহায়ক, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া, এই পাতা পিচ্ছিল হওয়ায় মানবদেহের বৃহদন্ত্রে পানি ও ইলেকট্রোলাইট শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে অন্ত্রের উপাদানগুলোর ভলিউম চাপ বৃদ্ধি পায় এবং কোলনের সঞ্চালন উদ্দীপ্ত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে দেহ থেকে সহজেই মল নিষ্কাশিত হয়। এই কারণে সোনা পাতাকে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের জন্য এক প্রাকৃতিক মহৌষধ বলা হয়।
সোনাপাতা পাচনতন্ত্রের সুরক্ষা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস, অম্বল এবং অন্যান্য পেটের সমস্যাকে কমাতে সক্ষম। পাশাপাশি, সোনাপাতা পেটের ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে, যা পেটের সাধারণ সুস্থতা বজায় রাখে। সোনা পাতায় থাকা এনথ্রানয়েড উপাদান হজম প্রক্রিয়াকে কার্যকর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪. ডায়াবেটিসে সহায়কসোনাপাতা হাইপোগ্লাইসেমিক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। একটি ছোট গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত নয়জন প্রাপ্তবয়স্ক কয়েক মাস ধরে নিয়মিত সোনাপাতার চা পান করেছেন। চিকিৎসার পরে অংশগ্রহণকারীদের লোহিত রক্তকণিকার গ্লুকোজের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে, যা প্রমাণ করে সোনাপাতা রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ব্যবহারবিধি
সোনা পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে আস্ত বা গুঁড়া করে।
১. গুঁড়া ব্যবহার করতে চাইলে এক বা দেড় চা-চামচ পাতা এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা রাখতে হবে। এরপর সকালে খালি পেটে পান করতে হবে। দিনে ২০-৩০ গ্রাম গ্রহণ করা যথেষ্ট, একবারের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়।
২. দুই কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ শুকনা পাতা ফুটিয়ে একটি কাপ পরিমাণ করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চায়ের মতো পান করতে হবে। এতে পেট নরম হয়ে এলে বা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে গেলে এই পাতার ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে।
সতর্কতা
১. হৃদরোগ, অন্ত্রের ক্ষত, প্রদাহ, অ্যাপেন্ডিসাইটিস এবং যকৃতের ক্যান্সারের রোগীদের সোনা পাতা ব্যবহার করা উচিত নয়।
২. সোনা পাতায় কিছু ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ইস্ট্রোজেনের একটি রূপ (এস্ট্রাডিওল) রয়েছে, যা এর শোষণে বাধা দিতে পারে এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
সূত্র: ভেরি ওয়েল হেলথ, টাইমস অব ইন্ডিয়া, হেলথ
আরও পড়ুন
শরীরই বলে দেবে আপনি কতটা স্ট্রেসে আছেন
এসএকেওয়াই/জেআইএম