বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অপরিসীম। আমরা তরুণ একটি দেশ। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে।
সে সময়ে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার যুক্তরাজ্যের বাজারকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া ৮ দিনের এসএমই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ‘এসএমই শক্তি, দেশের অগ্রগতি’ স্লোগানে শুরু হওয়া শতভাগ দেশীয় পণ্যের এই মেলা চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেলার আয়োজন করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তরুণ জনসংখ্যা, দ্রুত বাড়তে থাকা ভোক্তা বাজার ও সরকারের ব্যবসা সহজীকরণ উদ্যোগ এসব সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করছে। ভৌগলিক কারণে এশিয়াতে যাবতীয় অর্থনৈতিক প্রসার ঘটবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ও আমাদের দেশে ব্যবসার প্রসার ঘটবে।
বিদেশিরা বাংলাদেশকে ম্যানুফেকচারিং হাব হিসাবে মনে করছে উল্লেখ করে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, তারা যেটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করে সেটি হচ্ছে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ। এখানে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ সেভাবে গড়ে উঠছে না। মোবাইল, লেদারসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরি করতে না পারলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এদেশে আসবে না।
আরও পড়ুন‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে খাতভিত্তিক নীতি কাঠামো প্রয়োজন’যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো আরও ৬১ হাজার টন গম
তিনি বলেন, ব্যবসা শুরু করাটা বাংলাদেশে অনেক কঠিন। নিবন্ধন নিতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। একটি অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন থেকে শুরু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ করা যাবে, আমরা সেই কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। দুর্নীতিটা একদম বন্ধ করে দিতে হবে। ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে এসে দুর্নীতির শিকার হবে এটি ঠিক নয়।
তিনি আরও বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে ভোগান্তি হয়। এখানে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশে ব্যবসা করা খুব কঠিন। আমরা চাই ব্যবসার মাধ্যমে আপনারা যতদূর সম্ভব আরও এগিয়ে যান।
বিডা চেয়াম্যান জানান, ব্যবসা শুরু করার জটিলতা ও দুর্নীতিও বিনিয়োগের বড় বাধা। নানা দপ্তরে ঘুরে বেড়াতে হয় বলে হয়রানির শিকার হতে হয় উদ্যোক্তাদের। এ সমস্যা কমাতে বিডা ডিজিটাইজেশনের পথে হাঁটছে। খুব শিগগির একটি সিঙ্গেল প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা নিবন্ধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি সেবার আবেদন করা যাবে। এতে ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী একই সেবা পাবেন। পাশাপাশি দুর্নীতি কমবে, কারণ সশরীরে উপস্থিত হতে হবে না।
মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এসএমই ফাউন্ডেশনে চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নুরুজ্জামান ও এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদ সদস্য ও উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিয়র অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি নাসরীন ফাতেমা আউয়াল।
এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন। স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পরিচালক পর্ষদ সদস্য ও ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক সামিম আহমেদ।
এ সময় জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২৫ বিজয়ী ৬ জন মাইক্রো, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন অতিথিরা।
এবার মেলায় অংশ নিয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ’ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া হস্ত ও কারুশিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি, পাটজাত পণ্যের ৩৫টি, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি, শতরঞ্জি, বাঁশ বেত, হোগলা, সুপারিখোল, কাঠের ১৫টি, খাদপণ্যের ১৪টি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি, জুয়েলারি শিল্পের ৯টি, প্রসাধন খাতের ৭টি, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক সেবাখাতের ৫টি, হারবাল বা ভেষজশিল্পের ৫টি, প্লাস্টিক পণ্যের ৫টি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স খাতের ৩টি, ফার্নিচার খাতের ৩টি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল রয়েছে।
মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৮টি দপ্তর সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
ইএইচটি/এএমএ/জেআইএম