গাইবান্ধায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক কমিটিতে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এসএম খাদেমুল ইসলাম খুদিকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে পদত্যাগের আবেদন করেছেন এনসিপির সদস্য সচিব মাওলানা শাহ মাহমুদ।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা শাহ মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করন।
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর দলটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম স্বাক্ষরিত গাইবান্ধা জেলা আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে জাসদের নেতা এসএম খাদেমুল ইসলাম খুদিকে আহ্বায়ক ও মাওলানা শাহ মাহমুদকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্য বিশিষ্ট গাইবান্ধা জেলা আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন হয়।
এই কমিটিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গী ১৪ দলের শরিক জাসদের সক্রিয় নেতা খুদিকে আহ্বায়ক করায় স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে ৪ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে এনসিপির জেলা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া দেন তারা।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এনসিপি জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা শাহ মাহমুদ তার পদ থেকে পদত্যাগের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে আবেদন করেন।
তিনি পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘আমি কিছুদিন আগে গাইবান্ধা জেলার জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। দলের প্রতি আন্তরিকতা ও আদর্শিক অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা নিয়ে কাজ চলমান রেখেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই দলের পরিচিতি সভা করেছি। জুলাই-আগস্টে আহত ভাই-বোনদের খোঁজ খবর নিচ্ছি, যাচ্ছি শহীদ পরিবারের পাশে, ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার পাশাপাশি আমি সাংগঠনিক কাজ এগিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করছি, তা আমার ব্যক্তিগত নীতি, গণতান্ত্রিক বিশ্বাস ও সাংগঠনিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৭ দিনের ভিতরে বিনা নোটিশ এ পুনরায় কমিটি দিয়ে সংশোধিত আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য সচিব মনোনীত করছেন। কিন্তু যাকে আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়েছে তিনি আওয়ামীপন্থি ১৪ দলের শরিক জাসদের সক্রিয় নেতা, হাসানুল হক ইনুর অনুসারী। গত মাসেও তিনি তার সাংগঠনিক কাজ করেছেন। হঠাৎ কিভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে পূর্ণবাসিত হলো, আমরা বুঝতে পারছি না। ফ্যাসিবাদের দোসরকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি গাইবান্ধা জেলায় নেতৃত্ব দেওয়া আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। জুলাই-আগস্ট পরিপন্থি কাজ আমি করতে পারবো না। কারণ জুলাইয়ে আমার জেলায় ৬ জন ভাই শহীদ হয়েছেন এবং ৩০০ জনের কাছাকাছি আহত হয়েছেন।’
গাইবান্ধা জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা শাহ মাহমুদ বলেন, শনিবার (৬ ডিসেম্বর) এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক-সদস্য সচিবের বরাবরে পদত্যাগের আবেদন করছি। ফ্যাসিবাদী শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টিতে পূর্ণবাসিত হওয়াকে জুলাই শহীদ, আহতদের সঙ্গে গাদ্দারি করার সমান। এসব কারণে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। তাই গভীর বিবেচনা ও সমালোচনার পর আমি এনসিপির সদস্য সচিব পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আনোয়ার আল শামীম/এনএইচআর/এমএস