সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগ বাতিল করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন এ বিষয়ে চার আপিলকারীর আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া।
এ নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের তৃতীয় দিনের শুনানি শেষে রোববার (৭ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শরীফ ভূঁইয়া এমন মন্তব্য করেন। আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানি হয়।
শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টে পুরো সংশোধনী বাতিল চেয়েছিলাম। হাইকোর্ট কিছু কিছু অংশ বাতিল করেছেন। বাকিটা সংসদের বিবেচনার জন্য রেখেছেন। আমরা বলেছি হাইকোর্টের এই এপ্রোচ ভুল ছিল আইনগতভাবে। এটা সংশোধন করে আপিল বিভাগের হাইকোর্টের রায় বাতিল এবং পঞ্চদশ সংশোধনীকে পূর্ণাঙ্গ বাতিল করা উচিত।’
আপিলকারীদের এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগ বাতিল করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে ফিরে আসবে। আমাদের শুনানি আজকে শেষ করেছি। আরও দুজন আপিলকারী আছেন। আরও কয়েকজন পক্ষভুক্ত আছেন। তাদের শুনানি শেষে হয়তো আমরা কিছু জবাব দিতে পারি।’
২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। রাষ্ট্রপতি পরে ৩ জুলাই এর অনুমোদন দেন।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতিও দেওয়া হয়। এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকারের শপথ বৈধ: আপিল বিভাগনিউমুরিং টার্মিনাল: চুক্তি প্রক্রিয়া নিয়ে হাইকোর্টের দ্বিধা-বিভক্ত রায়বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট জারির নির্দেশ
পাশাপাশি অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়। সেই সঙ্গে আগে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
এই সংশোধনী বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। এরপর গত বছরের ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। পরে এই রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা। তাদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এছাড়া নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও রিট করেন।
রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের দিন বদিউল আলম মজুমদারসহ অন্য আবেদনকারীদের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার বিধান; সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ এবং সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য সংক্রান্ত ৭ (ক) এবং ৭ (খ); মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের বিধান নিয়ে হাইকোর্টের ক্ষমতা কমানো বিষয়ক ৪৪ (২) এবং ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান বাতিল করাকে বাতিল করা হয়েছে। ফলে সংবিধানের প্রস্তাবনা ও কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনে এই রায়ে গণভোটের বিধান ফিরে আসছে।
পরে এই রায়ের বিরুদ্ধেই সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি লিভ টু আপিল করেন। অন্য তিনজন হলেন- এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এছাড়া মোফাজ্জল হোসেন এবং জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক দুটি লিভ টু আপিল করেন। সেই সঙ্গে বিএনপির পক্ষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরীসহ কয়েকজন পক্ষভুক্ত হন। আপিলকারীদের দাবি, পুরো সংশোধনী বাতিল করতে হবে। গত ১৩ নভেম্বর লিভ টু আপিল গ্রহণ করে আপিলের অনুমতি দেন আপিল বিভাগ।
এফএইচ/একিউএফ/এমএস