দেশজুড়ে

খেয়াঘাটের টাকা লুটের অভিযোগ জামায়াত কর্মীদের বিরুদ্ধে

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে সরকারিভাবে আদায় করা খেয়াঘাটের টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জামায়াত কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রোববার (৭ ডিসেম্বর) চরএলাহী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) মো. সেলিম চৌধুরী উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন।

এর আগে গত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চরএলাহীর চরলেংটা খেয়াঘাট অবৈধভাবে দখলে নিতে এ হামলা চালানো হয়। এতে ভূমি অফিসের নিয়োগ করা দুই কর্মীকে আহত করে ছয় হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সেলিম চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় চরএলাহীর চরলেংটা ঘাট ইজারা না দিয়ে সরকারিভাবে খাস আদায় করা হয়। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে স্থানীয় জামায়াতের লোকজন ঘাটের দখল নিতে চাপ দিচ্ছিল। না দেওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় জামায়াতকর্মী মাহবুবুল হক, তার ছেলে শেখ ফরিদ ও রুবেল এবং সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া হেলালের নেতৃত্বে ১০-১২ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান।

এসময় সরকারি খাসের টাকা আদায়ের কেরানি জোবায়ের হোসেন সৌরভসহ দুজনকে পিটিয়ে ছয় হাজার টাকা লুটে নেওয়া হয়। পরে গত দুদিনের টাকা মাঝিদের কাছে জমা রাখা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিআইডব্লিউটিএ থেকে চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ফিরোজ আলম নামের এক জামায়াত নেতা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে ‘উড়িরচর লঞ্চঘাট-২’ নামে একটি ঘাটের ইজারা নিয়েছেন বলে মৌখিকভাবে জানানো হয়। তবে এ নিয়ে সরকারিভাবে কোনো কাগজপত্র আমরা পাইনি। তাছাড়া ফিরোজ আলম নবসৃষ্ট লঞ্চঘাট ইজারার কথা জানালেও তিনি উচ্চ আদালতের নিয়ন্ত্রণে থাকা চরএলাহীর চরলেংটা খেয়াঘাট অবৈধভাবে দখল করতে চান। বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানানো হয়েছে। উনাদের নির্দেশে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ফিরোজ আলম জাগো নিউজকে বলেন, “আমি চরলেংটা খেয়াঘাটের ইজারা পাইনি। তবে চরবালুয়া ৪-এর খালে ‘উডিরচর লঞ্চঘাট-২’ এর ইজারা পেয়েছি। সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীম ও তহসিলদার সেলিম চৌধুরী ওই ঘাটের দখল না দেওয়ায় আমার লোকজন চরলেংটা ঘাটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা ও পৌর জামায়াতের নেতারাও অবগত আছেন।’

হামলায় অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফিরোজ আলমের কাছ থেকে ঘাটের কাগজপত্র পেয়ে আমরা সেখানে যাই। তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হলেও সেখানে টাকা লুটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে নেতাদের উপস্থিতিতে বৈঠক হওয়ার কথা। বাকি কথা সেখানে বলবো।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী সরকারের সময় চরএলাহীর চরলেংটা ঘাটের ইজারা পান চরএলাহী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা শেখ বেলাল। পরে সংক্ষুব্ধ একটি পক্ষ ঘাটটি আন্তঃজেলা সীমানায় দাবি করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করলে তা স্থগিত হয়ে যায়। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে আওয়ামী লীগের লোকজন পালিয়ে গেলে চরএলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল মতিন তোতার ছেলেরা তা দখল করে টাকা আদায় করেন।

সম্প্রতি এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখা হলে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকার্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীম ঘাটটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সরকারিভাবে খাস আদায় করে আসছেন।

বসুরহাট পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা মোশাররফ হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘাটের ইজারা পাওয়া ব্যক্তিরা জামায়াতের কর্মী। তবে ব্যক্তির দায় দলকে দেওয়া যাবে না। ফিরোজ আলম ঘাটের ইজারা নিয়েছেন বলে জেনেছি। কোন ঘাটের কী ইজারা নিয়েছেন বা কেন এ সমস্যা হলো তা আমরাসহ বসে বিষয়টি দেখবো।’

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুবাইয়া বিনতে কাশেম জানান, চরএলাহী ইউনিয়নের চরলেংটা খেয়া ঘাটের বিষয়টি চরফকিরা ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সেলিম চৌধুরী আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাকে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলেছি।

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমি যোগদান করে আজই (রোববার) প্রথম অফিস করলাম। বিষয়টি শুনেছি। ভালোভাবে জেনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইকবাল হোসেন মজনু/এসআর/এমএস