রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তন আগামী ১৭ ডিসেম্বর। এ সমাবর্তনে আমন্ত্রিত বক্তা, অতিথি, সভাপতি—সবকিছু নিয়েই আপত্তি নিবন্ধন করা গ্র্যাজুয়েটদের। গ্র্যাজুয়েটদের বড় একটি অংশ সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তারপরও নির্ধারিত সময়ে সমাবর্তন আয়োজনে ‘অনড়’ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গ্র্যাজুয়েটদের তীব্র আপত্তির মুখেও ১৭ ডিসেম্বর সমাবর্তন আয়োজনের প্রতিবাদে ঢাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন গ্র্যাজুয়েটরা।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
তাদের অভিযোগ, তাড়াহুড়ো করে দায়সারা সমাবর্তন আয়োজনে মরিয়া বর্তমান প্রশাসন। চলতি সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী ডামাডোল, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সমাবর্তনে অংশ নিতে আগ্রহী নন তারা।
একই সঙ্গে সমাবর্তনে যে অতিথি, বক্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের সঙ্গে মানানসই নয় বলেও অভিযোগ করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইউনুস হৃদয়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ও অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুল মজিদ অন্তর। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চরম অবহেলার সঙ্গে এ দায়সারা সমাবর্তন আয়োজন করতে যাচ্ছে। সমাবর্তনপ্রত্যাশীরা যে তিন দফা দাবি জানিয়েছেন, তার প্রতি আমরা সংহতি জানাচ্ছি। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবিগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।
আলী ইউনুস হৃদয় বলেন, গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে যে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা দিন দিন ক্ষোভে রূপান্তর হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আবেগ ও অনুভূতি প্রশাসনকে অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলেই এ মহতী আয়োজন সফল হবে। কাউকে বঞ্চিত করে এ আয়োজন সফল হতে পারে না।
৬২তম ব্যাচের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী অর্বাক আদিত্য বলেন, আমরা দাবি জানিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই। তারা কাদের জন্য তাড়াহুড়ো করে এ আয়োজন করছেন, আমরা বুঝছি না। এখানে কারও কোনো স্বার্থ রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এরই মধ্যে সমাবর্তন আয়োজনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দায়সারা সমাবর্তন নিবন্ধিত গ্রাজুয়েটরা কখনও মানবে না। প্রশাসনকে অবিলম্বে তিন দফা দাবি মেনে নিতে হবে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও রাবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, যে দায়সারা আয়োজন করতে যাওয়া হচ্ছে, তা লজ্জাজনক। নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি এ অবজ্ঞা কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও মর্যাদার কথা বিবেচনা করে প্রশাসনকে ৩ দফা দাবির ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাবির ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাসিব নাহিদ বলেন, কর্মব্যস্ত ডিসেম্বর মাসে সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় আয়োজিত সমাবর্তনে উপস্থিত হওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। দায়সারা এ আয়োজন এরই মধ্যে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। যদি প্রশাসন কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।
এর আগে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমাবর্তন নিয়ে ৩ দফা জানান গ্র্যাজুয়েটরা। দাবি মানা না হলে সমাবর্তন বর্জনের ডাক দেওয়া হয়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তন পেছানোর দাবি জানিয়েছেন।
এএএইচ/ইএ