ক্যাম্পাস

মাদরাসা-কলেজ থেকে সমান আসনে ভর্তি নেবে আল-ফিকহ অ্যান্ড ল’ বিভাগ

আসন্ন ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তিতে পূর্বের নিয়মে শর্ত চালু করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-ফিকহ্ অ্যান্ড ল’ বিভাগ। এতে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ন্যায় মাদরাসা বিভাগ হতে ৪০ জন ও কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

জানা যায়, ইসলামী ও প্রচলিত আইনের সমন্বয়ে শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে আইন ও শরিয়াহ অনুষদের অধীনে ‘আল-ফিকহ্’ নামে যাত্রা শুরু করে বিভাগটি। ইসলামী শরিয়ত তথা ফিকহের সঙ্গে প্রচলিত আইনের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আরবিতে পারদর্শী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হতো বিভাগটিতে। তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রশাসন এই বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শর্ত বাদ দেয়।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হতো বিভাগটিতে। সেসময় ভর্তি পরীক্ষায় আল-ফিকহ সম্পর্কে আলাদা ২০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো। পরবর্তীতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর আমলে এই ধারা পরিবর্তন করে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০টি ও অন্যান্যদের জন্য ৪০টি আসন নির্ধারণ করে দেয়। একটি শিক্ষাবর্ষে এ ধারা থাকলেও পরে এ নিয়মও পরিবর্তন করা হয়। পরে মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই বিভাগটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়।

বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম মিলে প্রায় ২৫০০ নম্বরের আরবিতে ফিকহের বিষয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু বর্তমানে আরবিতে দক্ষতা নেই এমন শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসব বিষয়ে পড়াশুনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে তাদের জন্য বাংলা ভার্সনে লেখার সুযোগ দেন শিক্ষকরা। ফলে প্রচলিত আইনে পারদর্শী হলেও ফিকহের বিষয়ে পারদর্শী হতে পারছেন না তারা। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থেকে মোট ৮০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জন মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ড ও ৪০ জন কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিভাগের শিক্ষকরা জানান, বর্তমান নিয়মে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ায় আরবি কোর্সগুলো শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে বুঝতে পারছে না। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে ফলাফল খারাপ করে রিটেক পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এতে বিভাগে সেশনজট বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়। এই ধারা থেকে বের হয়ে পূর্বের ধারায় ফিরে যেতে চায় বিভাগটি। যাতে করে আরবি জানা শিক্ষার্থীরা এই বিভাগে ভর্তি হতে পারে।

বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিশুক শাহরিয়ার বলেন, ‘এটি একটি বিশেষায়িত বিভাগ তাই সব শিক্ষার্থীর জন্য এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেওয়াটা যৌক্তিক নয়। আমাকে যদি এই বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না দেওয়া হতো তাহলে হয়ত আমি হতাশা থেকে বাঁচতাম। প্রতি সেমিস্টারে তিনটি করে ফিকহের কোর্স থাকে যা ভালো আরবি না জানলে বোঝা প্রায় অসম্ভব। ফলে একদিকে শিক্ষকরা পাঠদানে সন্তুষ্ট নন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় সন্তুষ্ট নয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর সমাধান প্রয়োজন।’

আরেক শিক্ষার্থী দুলাল হোসেন বলেন, ‘আল ফিকহ বিভাগে ভর্তি হয়ে এই কারণে হীনমন্যতায় ভুগি যে, আমি ফিকহ পড়তে পারি না। কেননা আমি আরবি ভাষা জানি না।’

এ বিষয়ে বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘বিভাগের নাম যখন আল ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিস করা হয় তখন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫০ শতাংশ মাদরাসা ৫০ শতাংশ জেনারেল ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে তৎকালীন প্রশাসনের আমলে বিভিন্ন কারণে এটা পরবর্তীতে প্রয়োগ করা যায়নি। ফলে বিভাগের অনিচ্ছা সত্ত্বেও গুচ্ছের নিয়ম অনুযায়ী জেনারেল ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। এছাড়া বিভাগের পূর্বের ধারা অনুযায়ী আমরা সম্পূর্ণ মাদরাসা নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা যায়নি। তাই এবার এই শর্তেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হবে।’

বিভাগটির সিনিয়র অধ্যাপক ড. আবু বকর মো. জাকারিয়া মজুমদার বলেন, ‘বিজ্ঞানে পড়তে হলে যেমন বিজ্ঞানের শর্ত লাগে, তেমনি ফিকহ পড়তে হলে ফিকহের শর্ত লাগবে। ফিকহের কিছু বিশেষ শব্দ (টার্ম) আছে যা আরবি না জানা একজন শিক্ষার্থী হুট করে এসে বুঝবে না। এরূপ শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ায় বিভাগের উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে হাত ছিল সাবেক উপাচার্য ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী ও উপ-উপাচার্য ড. শাহিনুর রহমানদের। তারা জোর করে আমাদের ওপর এটা চাপিয়ে দেয়। এখন শিক্ষার্থীরা নিজেরা ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না, আর আমরাও পাঠদান করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়ছি।’

বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই শর্ত দেওয়া হয়েছে। এতে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। নতুন যারা আসবে তারা এই নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি হবে।’

ইরফান উল্লাহ/এমএন/জেআইএম