দেশজুড়ে

অবরোধে আটকা অ্যাম্বুলেন্স, নবজাতককে বাঁচাতে স্বজনের আহাজারি

ঢাকার কদমতলীর স্থানীয় বাসিন্দারা গ্যাসের দাবিতে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনিরআখড়া এলাকায় সড়ক অবরোধে নামেন। স্থানীয়দের অবরোধের ফলে ব্যস্ততম মহাসড়কে কয়েক ঘণ্টার জন্য তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় জনভোগান্তি। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি বিপদের সম্মুখীন হতে হয় অসুস্থ রোগীদের।

তেমনই একটি ঘটনা মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছে। অবরোধকালীন সময়ে এক মুমূর্ষু নবজাতককে নিয়ে পরিবার হাসপাতালে যাওয়ার পথে যানজটে আটকা পড়ে। এসময় সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে তার মা ও স্বজনরা অসহায়ের মতো ছোটাছুটি করতে থাকেন। এমন কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তবে ওই নবজাতক ও তার পরিবারের পরিচয় জানা যায়নি।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় লেনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কদমতলীর নুরপুর এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ তিন বছর ধরে তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছেন। তারা নিয়মিত বিল পরিশোধ করা সত্ত্বেও রান্না করার মতো গ্যাসও ভাগ্যে জোটে না। তাই আন্দোলনে নামেন। স্থানীয়রা মূলত এটির দ্রুত সমাধানের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।

তবে বিক্ষোভের ফলে মহাসড়কের কাজলা অংশের চট্টগ্রামমুখী লেনে মুমূর্ষু এক নবজাতককে বহন করা একটি অ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে। যানজটের কারণে নবজাতককে হাসপাতালে না নিতে না পেরে তার মা ও স্বজনদের ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের সুযোগ না দিলেও ধীর গতির বাহনের মাধ্যমে নবজাতককে হাসপাতালে পৌঁছাতে সুযোগ করে দেন।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ।

ঘটনাটি নিজের চোখে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানি শাহরিয়ার। এই তরুণ জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার পর এলাকাবাসী রাস্তা বন্ধ করে দেয়। আন্দোলনকারীরা যখন রাস্তা বন্ধ করে তখন আমার দোকানের সামনে দিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স অসুস্থ শিশুকে নিয়ে যাওয়ার পথে আটকে যায়। এরপর অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন যেতে পারছিল না তখন অ্যাম্বুলেন্সে থাকা মানুষদের ছোটাছুটি করতে দেখেছিলাম। একপর্যায়ে বাচ্চাটিকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী রাস্তা ফাঁকা করে দেয় এবং রিকশায় করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রাশেদুল ইসলাম জানান, ‘এলাকাবাসী এখানে আন্দোলনকালীন সময় একটি অ্যাম্বুলেন্স এক শিশু রোগীকে মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছিল। আন্দোলন হওয়ার কারণে অ্যাম্বুলেন্সটি যেতে পারছিল না এবং বাচ্চাটির অবস্থা খুব খারাপ হয়। একপর্যায়ে ওই বাচ্চাটিকে ভ্যানগাড়ি এবং রিকশায় করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাচ্চাটার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখেছিলাম। আমি তাকে মেডিকেলে নিয়ে যেতে দেখেছি, তবে তার পরিচয় কিংবা বর্তমান অবস্থা জানি না।’

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) খালেদ হাসান বলেন, গতকাল আমরা আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে মহাসড়ক হতে সরিয়ে দিয়েছিলাম। আজ তারা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমাধানের উদ্দেশ্যে বসবে। তবে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীর সম্পর্কে আমি অবগত নই।

মো. আকাশ/এফএ/জেআইএম