দেশজুড়ে

চরতিল্লি বাজারে প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার বেগুন বেচাকেনা

কাকডাকা ভোরে চারপাশ কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকলেও বাজারমুখী রিকশা-ভ্যানের টিং টিং শব্দ যেন জানান দেয় ব্যস্ততার শুরু। বাজারে ঢুকতেই চোখে পড়ে সারি সারি ভ্যান ও রিকশা, যার ওপরে সাজানো তরতাজা বেগুন। কোথাও আবার চাষিরা বেগুন নামিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন। পুরো বাজার যেন এক বেগুনের রাজ্যে পরিণত হয়েছে।

এমন দৃশ্যটি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার চরতিল্লি বাজারের। জেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরের এই বাজারটি সারা বছর তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকলেও শীত মৌসুমে রীতিমতো সরগরম হয়ে ওঠে। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় বেচাকেনা, যা চলে টানা ৫-৬ ঘণ্টা।

সাটুরিয়া ও সদর উপজেলার প্রায় ২৫টি গ্রামের চাষিরা তাদের পরিশ্রমে ফলানো বেগুন নিয়ে ভোরেই হাজির হন চরতিল্লি বাজারে। দেশের বিভিন্ন পাইকারি আড়তের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এখানে বেগুন কিনতে ভিড় জমান। চাষি ও পাইকারদের লেনদেনে প্রতিদিনই এই বাজারে প্রায় ২০ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি হয় বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।

চাষিরা বলছেন, মৌসুম শুরুর এই সময়ে বেগুনের দাম ও চাহিদা ভালো থাকায় তারা লাভের আশা করছেন। বেগুনের গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন বড় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গতবছর সাটুরিয়া উপজেলায় সবজি চাষ হয়েছিল এক হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ৪৩১ হেক্টর জমিতে শুধু চাষ করা হয় বেগুন। তবে শুধু তিল্লি ইউনিয়নেই ৩৪০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছে। এবছর উপজেলায় সবজি আবাদ করা হয়েছে এক হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৪৩৫ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ কর হয়েছে। যার মধ্যে শুধু তিল্লি ইউনিয়নে ২৬০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে প্রচুর পরিমাণ বেগুন উঠেছে। প্রতিটি স্তূপকে কেন্দ্র করে চলছে ব্যস্ত কর্মযজ্ঞ। কেউ নষ্ট ও পোকাক্রান্ত বেগুন আলাদা করছেন, কেউ মানসম্মত বেগুন পলিব্যাগে প্যাকেজ করছেন। আবার কেউ এসব প্যাকেট করা বেগুন দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য সড়কপথে পরিবহনের উদ্দেশ্যে গাড়িতে তুলছেন। এসব কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের বেশিরভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি তারা অতিরিক্ত আয় করার জন্য এসব কাজে অংশ নিচ্ছে।

পূর্ব চরতিল্লি গ্রামের বেগুন চাষি সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এবছর তিন বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত চার লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করেছি। এখন দামটা একটু কম। তাও ১০০০-১২০০ টাকা (২৫-৩০ টাকা কেজি) মণ বেগুন বিক্রি করতে পারছি।’

বেগুন ব্যবসায়ী উজ্জ্বল কাজী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ১৩ জন ভাগে এই বেগুনের ব্যবসাটা করি। আগে দামটা একটু বেশি ছিল। তখন আমরা প্রতিদিন ১০-১২ লাখ টাকার বেগুন কিনতাম। এখন দামটা একটু কম, তাও প্রতিদিন ৬-৭ লাখ টাকার বেগুন কিনি। এসব বেগুন যায় কারওয়ান বাজার, নিমসার ও মিরপুর। প্রতিদিন এই বাজারে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার বেগুন বেচাকেনা হয়।’

চরতিল্লি এলাকার ফাহিম খান মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। বেগুন বাছাইয়ের কাজ করেন তিনি।

ফাহিম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক ছাত্র লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করে এবং আমিও করি। প্রতিদিন দুপুরে আসি। রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বাড়িতে যাই। দৈনিক ৬০০ টাকার মতো আয় হয়।’

পাইকারি ব্যবসায়ী হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন ১৫-১৬ হাজার কেজি বেগুন কিনি। কোনো কোনো দিন ২০ হাজার কেজিও কেনা হয়। এসব বেগুন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়।’

এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার তানিয়া তাবাসসুম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতবছরের তুলনায় এবার বেগুনের আবাদ বেশি। এবছর ফলন ভালো হয়েছে। পোকা ও রোগের আক্রমণ কম ছিল। কৃষক দামও ভালো পেয়েছে। আশা করছি এবছর কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন।’

এসআর/এমএস