মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তিচুক্তি ভেঙে আবার সংঘাতে জড়িয়েছে থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ফের গোলাগুলি শুরু হয়। রক্তক্ষয়ী সংঘাত অব্যাহত রয়েছে মঙ্গলবারও।
যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে অবিলম্বে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবে লড়াই অব্যাহত রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া উভয়েই। এতে এ পর্যন্ত অন্তত আটজন মারা গেছেন। প্রায় চার লাখ সীমান্তবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রকেট ও ড্রোন হামলার অভিযোগথাইল্যান্ড–কম্বোডিয়ার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের বহু অংশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। রকেট হামলা, ড্রোন হামলা, বিশেষ বাহিনীর মোতায়েনের অভিযোগ এসেছে দুপক্ষ থেকেই।
আরও পড়ুন>>সীমান্তে ‘ভূতের শব্দ’ বাজিয়ে ভয় দেখাচ্ছে থাইল্যান্ড, জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার অভিযোগট্রাম্পের সামনে শান্তিচুক্তিতে সই করলো থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়াথাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘর্ষের নেপথ্যে কী?
থাই নৌবাহিনী বলছে, কম্বোডিয়ার বাহিনী বিএম-২১ রকেট দিয়ে তাদের সীমান্ত অঞ্চলে বেসামরিক এলাকায় হামলা চালিয়েছে, এমনকি গর্ত খুঁড়ে থাই ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছে।
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর অভিযোগ, থাইল্যান্ড রাতভর ভারী গোলাবর্ষণ করেছে, ব্যবহার করেছে ‘বড় আকৃতির ড্রোন’ এবং এমনকি ‘বিষাক্ত ধোঁয়া’। কম্বোডিয়া জানিয়েছে, তাদের সাতজন বেসামরিক মানুষ নিহত এবং প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। থাইল্যান্ড বলেছে, তাদের একজন সৈনিক নিহত হয়েছেন।
‘শান্তিচুক্তির কথা মনে নেই’এই উত্তেজনার মধ্যে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাসাক ফুয়াংকেতকেও সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,‘সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা চ্যালেঞ্জ না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান চলবে।’
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুলও বলেন, ‘যুদ্ধ থামাতে হলে কম্বোডিয়াকে থাইল্যান্ডের শর্ত মানতে হবে।’ ট্রাম্পের উপস্থিতিতে মালয়েশিয়ায় সই করা শান্তিচুক্তি প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ওটা আর মনে নেই।’
কম্বোডিয়ার প্রভাবশালী নেতা এবং বর্তমান সিনেট প্রেসিডেন্ট হন সেন ফেসবুকে বলেন, ‘শত্রুর হামলার সব পয়েন্টেই পাল্টা আঘাত হানতে আমাদের বাহিনী প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন>>থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে ফের সংঘাত, ঝুঁকিতে ট্রাম্পের শান্তিচুক্তিসামরিক শক্তিতে কম্বোডিয়া নাকি থাইল্যান্ড এগিয়ে?
শান্তিচুক্তি কেন ভেঙে পড়লো?গত অক্টোবরে মালয়েশিয়ায় সই হওয়া এই সমঝোতাকে ট্রাম্পের অন্যতম কূটনৈতিক অর্জন হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছিল। দুই দেশকে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, সমঝোতায় না এলে কোনো বাণিজ্য চুক্তিই করবেন না।
কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তেজনা বাড়ছিল। নভেম্বরের একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে চার থাই সৈন্য আহত হওয়ার পর থাইল্যান্ড শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন স্থগিত করে এবং অভিযোগ তোলে, কম্বোডিয়া নতুন ল্যান্ডমাইন পুঁতে চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। কম্বোডিয়া সেই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
গত জুলাই মাসের সংঘাতে আটক ১৮ কম্বোডিয়ান যোদ্ধাকে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারও আটকে গেছে।
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার মূল বিরোধটি ২০শ শতকে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের সময় আঁকা সীমান্ত মানচিত্রকে ঘিরে। এ নিয়ে দুই দেশের ব্যাখ্যায় এখনো বড় ধরনের অমিল রয়েছে। বিশ্লেষকরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, শান্তিচুক্তিটি ছিল কেবল শুরু, স্থায়ী সমাধান পেতে আরও বহু পথ যেতে হবে।
উত্তেজনা কমার লক্ষণ নেইজাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সহিংসতা বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং দু দেশের কাছে শান্তিচুক্তি রক্ষার প্রত্যাশা করেন।
কিন্তু সীমান্তে বাস্তবতা ভিন্ন। গোলাগুলি অব্যাহত, জনপদ খালি, ভয় আর অবিশ্বাস দ্রুত ছড়াচ্ছে দুই দেশের মানুষের মধ্যে।
নতুন সংঘাত ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটি কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যকার বিষয়। আমাদেরই মিলে সমাধান খুঁজে নিতে হবে।’
সূত্র: সিএনএনকেএএ/