অর্থনীতি

মাত্র ২ বছরেই চামড়া শিল্পে বাজিমাত উদ্যোক্তা তাহমিনার

মাত্র আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে ছোট্ট একটি কারখানার মাধ্যমে চামড়া শিল্পে যাত্রা শুরু করেছিলেন নারী উদ্যোক্তা তাহমিনা আক্তার শাম্মী। দুই বছরের ব্যবধানে তার বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। মাসে এখন প্রায় দুই লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেন দেশের বাইরে। আর দেশের ভেতরে করপোরেট মার্কেটেই ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করেন তিনি। এর বাইরে চলতি বছরে গড়ে তোলা শোরুম থেকেও পাইকারি বিক্রি বেশ ভালো।

‘অর্লিনস লেদারস অ্যান্ড ফুটওয়্যার’ এর এমডি তাহমিনা আক্তার শাম্মীর এই গল্প সফলতার কথাই জানান দিচ্ছে। তবে এই পথে বেশ প্রতিবন্ধকতা পোহাতে হয়েছে তাকে। দেশের বাইরে পণ্য রপ্তানি করতে এখনো সরাসরি ক্রেতা খুঁজে পাননি তিনি।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া ৮ দিনের এসএমই মেলার তৃতীয় দিন চলছে। ‘এসএমই শক্তি, দেশের অগ্রগতি’ স্লোগানে শুরু হওয়া শতভাগ দেশীয় পণ্যের এই মেলা চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসএমই ফাউন্ডেশন এই মেলার আয়োজন করেছে। মেলা প্রাঙ্গণে কথা হলে জাগো নিউজকে নিজের ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত জানান উদ্যোক্তা তাহমিনা।

তাহমিনা আক্তার শাম্মী জানান, ২০২৩ সালে ছোট একটি ফ্যাক্টরি দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। তখন মাত্র দুইজন কর্মচারী ছিলেন। এখন তার ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন ১৫ জন। চলতি বছরেই হাজারীবাগে শোরুম দিয়েছেন। সেখানেও কাজ করছেন দুজন কর্মচারী। দেশ ও দেশের বাইরে সবমিলিয়ে তার বেচাকেনা ভালো। তবে এ পথে এখনো প্রতিবন্ধকতা দেখছেন তিনি। দেশের বাইরে পণ্য রপ্তানি করতে এখনো সরাসরি ক্রেতা খুঁজে পাননি এই উদ্যোক্তা।

শুরুর গল্প শুনিয়ে শাম্মী বলেন, ‘ফ্যাক্টরিটা শুরু করার আগে আমি বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রকল্পে কাজ করতাম। এই প্রকল্পে কাজ করতে করতে আমার মনে হয়েছে চামড়া শিল্পটি অনেক বড়। এর রপ্তানি সম্ভাবনাও অনেক বেশি। যদিও রপ্তানিতে যেতে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারেও চাহিদা বেশ বিশাল। পরে এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিক থেকে ট্রেনিং নিই। বিশেষত বিসিক থেকে ট্রেনিং নিয়েই হাজারীবাগে ফ্যাক্টরিটা শুরু করি।’

এসএমই মেলায় অংশ নেওয়া স্টলে দর্শনার্থী ও ক্রেতার ভিড়/ছবি: জাগো নিউজ

তিনি বলেন, ‘হাজারীবাগে ছোট একটি ফ্যাক্টরি নিয়েই আমি প্রথমে শুরু করেছিলাম। তারপর সেই বছর বাণিজ্যমেলায় অংশ নেই। প্রথমে মাত্র একটি মেশিন, একজন কারিগর ও একজন হেল্পার নিয়ে ফ্যাক্টরির যাত্রা শুরু হয়। দুমাস পরেই আমার ফ্যাক্টরিতে লোকবলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ জনে। বাণিজ্যমেলার পরে ফ্যাক্টরিকে পুরোদমে সাজাই। প্রথমে মেশিনসহই একটি ফ্যাক্টরি ভাড়া নিয়েছিলাম। যে কারণে আমার সমস্যা হয়নি। মেশিন একটি কিনলেও অন্যান্য ফ্যাক্টরির কারণে ব্যাকআপ ছিলো। হাজারীবাগে এই সুবিধাটি আছে মেশিন কম থাকলেও অন্য ফ্যাক্টরি থেকে কাজ করিয়ে নেওয়া যায়।’

নারী উদ্যোক্তা তাহমিনা আক্তার শাম্মী বলেন, ‘বায়িং হাউজের মাধ্যমে দেশের বাইরে আমি বড় আকারে দুটি লট পাঠিয়েছি। এর বাইরে কানাডা ও আমেরিকায় বাংলাদেশিদের আউটলেট রয়েছে। তারা নিয়মিত আমার কাছ থেকে পণ্য নিচ্ছে। প্রতিমাসেই ওরা আমার ফ্যাক্টরি থেকে পণ্য নেয়। প্রতি মাসে ১ থেকে ২ লাখ টাকার পণ্য দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে। আর প্রতি মাসে করপোরেট অর্ডার আসে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার।’

প্রতিবন্ধকতা জানতে চাইলে এই উদ্যোক্তা জানান, প্রথম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে মার্কেট সৃষ্টি করা। আমরা জন্য যেটা সহজ হয়েছে, অন্য সবার জন্য সেটা সহজ নয়। রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করা অনেক বেশি কঠিন ও চ্যালেঞ্জের। বায়ার খুঁজে পাওয়া কঠিন। এসএমই ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেলায় নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ করে ওইসব মেলায় যাওয়া সহজ নয়। আবার লোকাল মার্কেটেও করপোরেট ক্রেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন।

এদিকে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাহারী পণ্যে সেজেছে ৮ দিনের এই এসএমই মেলা। চামড়াজাত পণ্য, পাট পণ্য ও বস্ত্র পণ্যসহ বাহারী পণ্যের সমাহার। মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদেরও ভিড় রয়েছে। তবে মেলা এখনো সেই অর্থে জমে উঠেনি বলে জানিয়েছেন কয়েকজন বিক্রেতা। তাদের মতে, শেষ দিকে মেলায় পা ফেলার জায়গা পাওয়া যাবে না। তখন বিক্রিও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে ইউমেন এমপাওয়ার অর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রুমানা হোসেন বলেন, আগের বারের চেয়ে এবার মেলা ভালো জমেছে। তবে সামনের দিনে আরও ভালো হবে। এখনো বেচাকেনা সেভাবে শুরু হয়নি।

এবারের মেলায় তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া হস্ত ও কারু শিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি, পাটজাত পণ্যের ৩৫টি, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি, শতরঞ্জি, বাঁশ বেত, হোগলা, সুপারিখোল, কাঠের ১৫টি, খাদ্যপণ্যের ১৪টি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি, জুয়েলারি শিল্পের ৯টি, প্রসাধন খাতের ৭টি, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাতের ৫টি, হারবাল বা ভেষজ শিল্পের ৫টি, প্লাস্টিক পণ্যের ৫টি, ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স খাতের ৩টি, ফার্নিচার খাতের ৩টি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল রয়েছে।

মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৮টি দপ্তর সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

ইএইচটি/এমএমকে/এমএস