আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা রাজধানীর গুলশানের বাড়ি সরকারের কাছে হস্তান্তরে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি উল্লেখ করে ২০২৪ সালের ১৯ মার্চ রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে এই সম্পত্তি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়েছিল। সম্প্রতি ওই রায়ের ৫২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে হাইকোর্টের রায়ের পর একই বছরের ২৪ মার্চ সাবেক ফুটবলার সালাম মুর্শেদীর বাড়ির বিষয়ে স্থিতাবস্থা দিয়েছিলেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে সালাম মুর্শেদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দিয়েছিলেন চেম্বার জজ আদালত।
বাড়িটি নিয়ে এর আগে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এটি নিষ্পত্তি করে বাড়ি হস্তান্তরে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় দেন।
আদালতে ওই সময় রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রায়ের পর তিনি বলেছিলেন, সালাম মুর্শেদীর গুলশানের যে বাড়ি, সেটি আসলে পরিত্যক্ত সম্পত্তি। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত রায় দিয়েছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। সরকারের তালিকায় রয়েছে। সালাম মুর্শেদীকে রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তা বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অনীক আর হক জানান, রায়ে উদ্ধার হওয়া বাড়িটি কোনো ব্যক্তিবিশেষকে লিজ না দিয়ে জনস্বার্থে সংরক্ষণ বা ব্যবহার করতে বলা হয়। এছাড়া বাড়ি হস্তান্তরে জালিয়াতি প্রশ্নে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আইন অনুসারে অনুসন্ধান করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২-এর ১০৪ নম্বর সড়কে সিইএন (ডি)-২৭-এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু সালাম মুর্শেদী সেটি দখল করে বসবাস করছেন।
রিটে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ও ২০২২ সালের ৪ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করা হয়।
২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেওয়া চিঠিতে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও সালাম মুর্শেদী কীভাবে বাড়িটি দখল করে আছেন, রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে এ ব্যাখ্যা চেয়েছিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে চিঠি আমলে না নেওয়ায় ফের ২০২২ সালের ৪ জুলাই চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে ভবনটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও কীভাবে রাজউক চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে সেটির নামজারি ও দলিল করার অনুমতি দেওয়া হলো সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে ব্যাখ্যা দিতে অনীহা দেখিয়েছেন।
রিটের পর ২০২২ সালের ১ নভেম্বর আদালত রুল জারি করে আদেশ দেন। রুলে বাড়িটি বেআইনিভাবে দখলে রাখার অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। আর বাড়ি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে দুদক আইনজীবী আদালতকে জানান, আদালতের নির্দেশের পর বাড়িটি নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে বাড়িটির বিষয়ে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষীর ভিত্তিতে দুদক সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ৫ ফেব্রুয়ারি মামলা করে। পরে এ সংক্রান্ত রুলের ওপর ৩ মার্চ শুনানি শেষে ১৯ মার্চ রায় ঘোষণা করেন আদালত।
এফএইচ/একিউএফ