অস্ট্রেলিয়ায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে দেশটির সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে আগ্রহী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। অস্ট্রেলিয়ায় অর্থ পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) তথ্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় সচিব পর্যায়ের আলোচনা প্ল্যাটফর্ম ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে মূলত পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা, বিনিয়োগ, শিক্ষা ও প্রযুক্তি সহযোগিতা, অভিবাসন, ভিসা সহজীকরণ এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
বিএফআইইউ এর কাছে তথ্য রয়েছে যে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেক অর্থ অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়েছে। এপিজি (এশিয়া/প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং) এর নীতিমালা অনুযায়ী দুই দেশ একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে। ঢাকার পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়াকে এই অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হবে এবং তথ্য আদান-প্রদান করা হবে।
বৈঠকে নির্বাচন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, কৃষি, ব্লু-ইকোনমি, জ্বালানি, আইসিটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, সফর বিনিময়, অভিবাসন, কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ, মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকট, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, কাউন্টার টেররিজম, ইন্দো-প্যাসিফিক এবং বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ প্ল্যানের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশেষভাবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সফর বিনিময়, মাইনিং সেক্টরে দক্ষ কর্মী প্রেরণ এবং টিভিইটি ও টিএএফই এর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হবে। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া মানবাধিকার, নিরাপদ অভিবাসন, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়কে গুরুত্ব দিতে পারে।
ঢাকার পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়াকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ পাঠানোর অনুরোধ করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এছাড়া উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গফ হুইটলাম বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিডনিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সফর হয়নি।
মার্চে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমন্বয় বজায় থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন কমানোর পর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার তহবিল বাড়ানোর অনুরোধ করা হবে। ২০২৬ সালের যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনায় (জেআরপি) অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা বাড়ানোতে জোর দেওয়া হবে।
বৈঠকে মানবাধিকার, জাতিসংঘ ফোরামে সহযোগিতা, ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন সংকটসহ নানা বিষয় আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই এফওসি দুই দেশের সম্পর্কের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে।
জেপিআই/এমএমকে