অর্থনীতি

নির্বাচনের তফসিল হলে সব বন্ধ হয়ে যাবে, এটি ভুল ধারণা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করতে পারে—এ ধরনের কাজ ছাড়া সরকার সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেছেন, আমাদের অনেকের ধারণা- নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে সব বন্ধ হয়ে যাবে—এটা হয় না, এটা ভুল ধারণা। নির্বাচনকে প্রত্যক্ষভাবে ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাবিত করে), শুধু সেসব কাজ আমরা করতে পারবো না।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।

তফসিল হলে রোজার আগে আপনাদের (সরকারের) কেনাকাটা অব্যাহত থাকবে কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলেই সব বন্ধ হয়ে যাবে নাকি? তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাস যখন ছিল সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নাকি? 

তিনি বলেন, নির্বাচনকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে সরকার শুধু সে কাজগুলো করতে পারবে না। তফসিল হলেই কি আমাদের বাজেট বন্ধ থাকবে? বেতন বন্ধ থাকবে? সব প্রজেক্ট কি বন্ধ থাকবে? আসলে নির্বাচনের সঙ্গে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার কোনো কিছু তো নির্বাচনের জন্য বন্ধ থাকবে না। পাঁচটি ব্যাংক এক হবে, ৯টি এনবিএফআই (লিজিং কোম্পানি) এক হবে। ওই কাজগুলো তো বন্ধ থাকবে না।

তাহলে কি অধ্যাদেশও জারি হবে? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অধ্যাদেশের ব্যাপারে আমরা এখন জানি না, নতুন কোনো অধ্যাদেশের ব্যাপার এখন পর্যন্ত নেই। কারণ, ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট পাস হয়ে গেছে। এনবিএফআই পাস হয়ে গেছে। এনবিআরের তো সব শেষ হয়ে গেছে। এনবিআরে শুধু বাকি ম্যানপাওয়ার, ওটার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

বৈঠকের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এবার আমার জানা মতে ফসল ভালো হয়েছে। এখন ডিপেন্ড করে বাজারে কিভাবে অন্যরা কী করবে। রোজার আগে আমরা মসুর ডালের ব্যাপারে প্রিপারেশন নিচ্ছি। খেঁজুরের ব্যাপারে কিছুদিন পরে আমরা একটা ব্যবস্থা নেবো।

তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তক যেগুলো বাকি ছিল, একেবারে ক্লাস ওয়ান থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েকটা আমরা রিটেন্ডার করতে বলেছিলাম। পাঠ্যপুস্তক সবগুলো আমরা অ্যাপ্রুভ করেছি আগেরগুলো। আশাকরি পাঠ্যপুস্তকগুলো এবার আমরা যথাসময়ে পাবো। হয়তো এদিকে-সেদিক একটু হবে। তবে কোনো বেশি ডিলে হবে না, হওয়ার কথা না। আমরা কোয়ালিটিও মেনটেন করছি।

শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা কী বলেছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, উনি বলেছেন আমরা যথাসম্ভব জানুয়ারির মধ্যে যেটা টার্গেট করবো। কতগুলো তো হয়ে যাবেই। দুই-একটি শ্রেণির হয়তো, আজকে যেমন কয়েকটা হয়েছে একটু সময় লাগতে পারে। কিন্তু বাকিগুলাই যে আগে দিয়েছি ওটা হয়ে যাবে।

নির্বাচনের আগে বই দেওয়া সম্ভব হবে কি না? এ প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে প্রিন্ট হলে দেবো। নির্বাচনের সঙ্গে বইয়ের কী সম্পর্ক? নির্বাচন তো বলবে না বই দিয়েন না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কতগুলো রেস্ট্রিকশন আছে। কিন্তু বইয়ের ব্যাপারে তো আমরা আরও ইনকারেজ করবো।

নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বাড়ার বিষয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি এমন একটা জিনিস একটা জায়গা থেকে নামিয়ে আনা কঠিন। আমরা ১৪ থেকে নামিয়ে এনেছি। মূল্যস্ফীতি শুধু মনিটারি পলিসি টাইট করে, ইন্টারেস্ট টাইট করে হয় না। সাপ্লাই সাইটটা ভেরি ইমপোরটেন্ট।

তিনি বলেন, আজকে আমরা মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দিলাম, কয়দিন পরে দেখবেন মসুর ডালের দাম কমবে। কারণ, ভয় পাবে যে ২০ হাজার টন মসুর ডাল আসবে। এখন এই জন্য তো আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু এখানে ডায়নামিস্ট সবচেয়ে বেশি হলো মার্কেটে যারা রিটেলার, হোলসেলার যারা ইমপোর্ট করে। সয়াবিনের দাম দেখেন না, কয়দিন আগে বাড়িয়ে দিল ওরা।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, পেঁয়াজের দামটা বেড়েছে। কারণ, ওটার সাপ্লাই কমেছে। এখন পাশের দেশ পেঁয়াজ আমদানির জন্য রিকোয়েস্ট করছে।

আপনি কি বলতে চাচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি সরাসরি সেটি বলবো না। মার্কেট ডায়নামিক, মার্কেটের সঙ্গে এফিশিয়েন্টলি এবং স্বচ্ছভাবে কাজ এখনো সম্পূর্ণভাবে করছে না ডেফিনেটলি। তা না হলে কেন হবে।

এমএএস/এমকেআর