সচিবালয় ভাতার দাবিতে কর্মচারীদের হাতে প্রায় ছয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সচিবালয় ত্যাগ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পুলিশের সহায়তায় অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে সচিবালয় ত্যাগ করেন অর্থ উপদেষ্টা।
এর আগে দাবি আদায়ে দুপুর আড়াইটা থেকে ২০ শতাংশ ‘সচিবালয় ভাতা’র দাবিতে অর্থ উপদেষ্টাকে সচিবালয়ে ১১ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় তার দপ্তরে অবরুদ্ধ করে রাখেন কর্মচারীরা।
উপদেষ্টাকে তার দপ্তর থেকে বের করার আগে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট প্রবেশ করে আন্দোলনকারীদের বাঁশি বাজিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। এসময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সচিবালয়ে কর্মরত চাকরিজীবীদের সচিবালয় ভাতার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে আগামীকাল।
আন্দোলনকারী একজন কর্মচারী জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার মধ্যে সচিবালয়ে ভাতার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এই আশ্বাসে আমরা অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সরে গেছি।
বুধবার দুপুর আড়াইটার পর থেকে কর্মচারীরা দলবেঁধে এসে সচিবালয়ের অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। তারা সচিবালয় ভাতার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তারা জানিয়েছেন, সচিবালয় ভাতার গেজেট জারি করা ছাড়া তারা যাবেন না।
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি বাদিউল কবিরের নেতৃত্বে কর্মচারীরা এ আন্দোলন শুরু করেন।
সন্ধ্যা ৫টার দিকে বাদিউল কবির কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আজ আপনারা এত উত্তাল এবং অশান্ত কেন হয়েছেন, কারণ আছে না? দুদক কী আমাদের চেয়ে শক্তিশালী? দুদকের জিও জারি করেছিল হোয়াটসঅ্যাপে। সচিবালয় ভাতার জিও ছাড়া আমরা এখান থেকে এক কদমও নড়বো না।’
অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে রাখায় তার দপ্তরে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেন। এছাড়া ১১ নম্বর ভবনের নিচেও বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়। তবে সন্ধ্যার পর নিচে থাকা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চতুর্থ তলায় গিয়ে অবস্থান নেন।
অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করা কর্মচারীরা জানিয়েছেন, জাতীয় আন্দোলনের কেন্দ্র-ঝুঁকির মধ্যেও দায়িত্ব পালন করি আমরা। জাতীয় প্রেসক্লাব-সচিবালয় এলাকা দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক ও সরকারি/বেসরকারি পেশাজীবী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। ঘন ঘন সমাবেশ, মিছিল ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে সচিবালয় কর্মীদের প্রতিদিনই বাড়তি ঝুঁকি ও চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়।
তারা বলেন, অতিরিক্ত সময় কাজ করি কিন্তু কোনো ওভারটাইম নেই। বিকেল ৫টার পরও ৮-৯টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়, কারণ জরুরি ফাইল, নীতি-নির্ধারণ ও সমন্বয়মূলক কাজ থেমে থাকে না। কিন্তু এ অতিরিক্ত শ্রমের জন্য কোনো ওভারটাইম সুবিধা নেই-যা সচিবালয় ভাতার যৌক্তিকতা আরও স্পষ্ট করে।
রাষ্ট্রপতির/প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে টিপ টপ ভাতা এবং অতিরিক্ত কাজের জন্য আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে কাজ করেন। উচ্চ দায়িত্ব, অতিরিক্ত সময়, গোপনীয়তা, ঝুঁকি, বিশেষ ব্যয় এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব-সবকিছু বিবেচনায় ‘সচিবালয় ভাতা’ চালু করা অত্যন্ত যৌক্তিক, স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা।
আরএমএম/এমআইএইচএস/