বাংলাদেশি খাবার মানেই লোভনীয় মুখরোচক স্বাদ, সব মিলিয়ে যেন সুখের এক প্যাকেজ। কিন্তু এই স্বাদের উৎসেই যদি লুকিয়ে থাকে আপনার হৃদয়ের জন্য দৈনন্দিন ঝুঁকি?
কোন ধরনের খাদ্যাভ্যাস ও খাবার আমাদের হার্টের জন্য ভালো ও কোনগুলো ক্ষতিকর এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন রাইয়ান হেল্থ কেয়ার হসপিটাল ও রিসার্চ সেন্টারের পুষ্টিবিদ লিনা আক্তার।
তিনি বলেন, আমাদের খাবার টেবিলের অদৃশ্য শত্রু হচ্ছে অতিরিক্ত লবণ আর তেল। ভাতের সঙ্গে কাঁচা লবণ ছিটিয়ে খাওয়া, টক বা মরিচের আচার, ফল খাওয়ার সময় লবণ-মরিচ ছিটিয়ে নেওয়া — এসব অভ্যাস এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে ক্ষতি হয়তো আমরা টেরই পাই না। কিন্তু শরীর ঠিকই হিসাব রাখে। লবণের বাড়তি সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, হৃদয়ের ওপর চাপ তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে এই চাপই রূপ নেয় উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে।
শুধু বড়রা নন, শিশু ও কিশোরদের নিয়েও এখন উদ্বেগ বাড়ছে। বাসায় বা স্কুল শেষে তাদের হাতে থাকে চিপস, চকলেট, বিভিন্ন রঙিন প্যাকেটজাত খাবার। দেখে মনে হয় ছোট্ট একটা নাস্তা, কিন্তু এগুলোতে লুকিয়ে থাকে অতিরিক্ত সোডিয়াম, চিনি, আর ট্রান্সফ্যাট। এভাবে শিশুরা অল্প বয়স থেকেই এমন উপাদান গ্রহণ করছে, যা ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের প্রবণতা বাড়ায়।
আরেকটি বড় সমস্যার নাম তেল। ভাজাপোড়া আমাদের খাবার সংস্কৃতির স্থায়ী সদস্য। ডুবো তেলে সিঙ্গারা-সমুচা, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিংবা বাসায় বারবার ব্যবহার করা তেল — এসবেই বৃদ্ধি পায় ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট। এতে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বেড়ে ধমনী শক্ত হতে থাকে। দীর্ঘদিনের এই প্রক্রিয়া একসময় হৃদরোগের দিকে ঠেলে দেয়।
সম্প্রতি বাসায় টেস্টিং লবনের ব্যবহারও বেড়েছে। রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর নামে যে অতিরিক্ত সোডিয়াম যোগ হয়, তা লবণের মতোই রক্তচাপ বাড়িয়ে হার্টের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।
লিনা আক্তারের মতে, ক্ষিধে পেলেই বাইরের ভাজাপোড়া বা ফাস্টফুড — এই প্রবণতাই বাংলাদেশের মানুষের হৃদরোগের বড় সহায়ক। সামান্য খাবারের স্বাদ বাড়াতে গিয়ে আমরা নিজের অজান্তেই হার্টের ক্ষতি করছি।
তবে এর প্রতিকারে তার পরামর্শ খুব সহজ। স্বাদ কমানো নয়, বরং সচেতনতা বাড়ান। লবণ কমান, তেল কমান, প্যাকেটজাত খাবারের সখ্যতা কমান। তিনি মনে করেন, খাদ্যাভ্যাসে ছোট ছোট পরিবর্তনই ভবিষ্যতের বড় বিপদ ঠেকাতে পারে।
অর্থাৎ, প্লেটে একটু কম লবণ আর কম তেল মানেই আপনার হার্টের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা।
এএমপি/জেআইএম