আন্তর্জাতিক

দুর্নীতির অভিযোগে বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট গ্রেফতার

বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইস আরসে দুর্নীতির একটি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। এক মাস আগে রক্ষণশীল নেতা রদ্রিগো পাজ দেশটিতে ক্ষমতায় আসেন। এরপরই তাকে গ্রেফতার করা হলো।

কর্মকর্তারা জানান, আরসের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের (২০০৬–২০১৯) আমলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সরকারি তহবিল আত্মসাৎ করেছেন। দুর্নীতি দমন পুলিশের বিশেষ ইউনিট নিশ্চিত করেছে যে তিনি বর্তমানে লা পাসে তাদের সদর দফতরে হেফাজতে রয়েছেন।

পাজ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মারকো আনতোনিও ওভিয়েদো বলেন, আরসের গ্রেফতার উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানকে তুলে ধরে। তিনি বলেন, এ বিশাল অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আমরা গ্রেফতার করবো।

তবে আরসের সমর্থকরা তার গ্রেফতারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। সাবেক মন্ত্রী ও আরসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মারিয়া নেলা প্রাদা বলেন, কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই তাকে রাস্তায় থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে—এটি ক্ষমতার অপব্যবহার।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আরসে ও কয়েকজন কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় ‘ইন্ডিজিনাস পেসান্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ থেকে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছেন—যা গ্রামীণ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ব্যয় হওয়ার কথা ছিল।

আরসে ২০০৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এই তহবিলের পরিচালনা বোর্ডে ছিলেন এবং ব্যক্তিগত খরচে টাকা ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বলিভিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রজার মারিয়াকা জানান, আরসে নীরব থাকার অধিকার প্রয়োগ করেছেন এবং বিচারকের সামনে তোলা হবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি বিচারাধীন অবস্থায় হেফাজতে থাকবেন কি না। অভিযোগ প্রমাণ হলে ৪–৬ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

গত অক্টোবরের নির্বাচনে পাজ জয়ী হন, যখন জনগণ দেশের অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি ঘাটতি এবং সরকারি সম্পদের ঘাটতিতে ক্ষুব্ধ ছিল—যা আরসের প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হয়।

তবে বলিভিয়ার বিচারব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগে সমালোচিত। অতীতের সরকারগুলো প্রতিপক্ষকে টার্গেট করতে আদালত ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মোরালেস ও আরসে তাদের সময়েও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।

অপরদিকে, সাবেক অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট জেনিন আনিয়েজসহ ডানপন্থি অনেক নেতাকেও কারাবন্দি করা হয়েছিল, যদিও বর্তমান সরকারের আমলে তাদের অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন।

ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট পাজ পূর্ববর্তী বামপন্থি নীতির অনেক পরিবর্তন এনেছেন, যা দেশে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মেরুকরণের পর নতুন দিক নির্দেশ করছে।

সূত্র: ইউএনবি

এমএসএম