জাতীয়

স্পা সেন্টারের আড়ালে বাধ্যতামূলক যৌনবৃত্তি, ১২ ভুক্তভোগী উদ্ধার

দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে অল্প বয়স্ক নারীদের ঢাকায় এনে বাধ্যতামূলকভাবে পতিতাবৃত্তিতে করানোর অভিযোগে ৬ জনকে আটক করেছে সিআইডি। একই সঙ্গে ১২ জন ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে ৭ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৭), মো. রাকিবুল ইসলাম (২৫), গোলাম মোর্শেদ ওরফে সৌমিক (২৬), মো. রাব্বি ইব্রাহীম (২৩), জহিরুল (৩৩) এবং শ্যামল কুমার (৪৭)।

জসীম উদ্দিন খান বলেন, সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট গতকাল (১০ ডিসেম্বর) বনানী ‘রিলাক জোন বিউটি পার্লার এন্ড সেলুন’ এ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে।

এ বিষয়ে সিআইডি বাদী হয়ে বনানী থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করে।

তিনি বলেন, গ্রেফতাররা ছাড়াও এই মামলায় ‘রিলাক জোন বিউটি পার্লার এন্ড সেলুন’ নামীয় স্পা সেন্টারের মালিক মো. মোবারক আলী ওরফে সবুজক (৩৬) অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বনানী এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ‘রিলাক জোন বিউটি পার্লার এন্ড সেলুন’ নামীয় স্পা সেন্টারটি পরিচালনা করা হতো। অভিযানকালে ফ্ল্যাটটির একাধিক কক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা ও অনৈতিক কার্যকলাপের উদ্দেশে জড়ো করে রাখা অল্পবয়স্ক নারীদের দেখতে পেয়ে তাদের উদ্ধার করে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট।

উদ্ধার নারীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্চ বেতনের চাকরি, বিউটি পার্লারে নিরাপদ কাজ, থাকার ব্যবস্থাসহ বৈধ কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের রাজধানী ঢাকায় আনা হয়। পরবর্তীতে চাপ প্রয়োগ, ভয়ভীতি ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে নানা কৌশলে স্পা সেন্টারের আড়ালে যৌন শোষণের কাজে বাধ্য করা হতো। ভবনের মালিক পলাতক অভিযুক্ত মো. দেলোয়ার হোসেন অবৈধ ও অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হবে জেনেও ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে উঠে আসে।

মানবপাচার ও যৌন শোষণের বিরুদ্ধে সিআইডির এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ধরনের প্রতারণামূলক চক্র সাধারণত গ্রামের দরিদ্র পরিবারের নারীদের টার্গেট করে থাকে। তাই এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, সিআইডির মানব পাচার ইউনিট এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অজ্ঞাত অন্য সদস্যদের শনাক্তকরণ ও অন্যান্য আইনানুগ প্রক্রিয়ার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ধারা ৩ (১)(গ) অনুযায়ী দেশের ভেতরে বা বাইরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্য কোনো শোষণ বা নিপীড়নের উদ্দেশে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেওয়া সংক্রান্ত কার্যক্রমকে মানব পাচার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কেআর/এএমএ