আন্তর্জাতিক

ইংরেজি প্রশ্ন ‘ভয়াবহ কঠিন’, বিতর্কের মুখে দ. কোরিয়ায় ভর্তিপরীক্ষা প্রধানের পদত্যাগ

দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা হিসেবে পরিচিত আট ঘণ্টা দীর্ঘ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা বা ‘সুনেং’। তবে এবারের পরীক্ষায় ইংরেজি প্রশ্নের ভাষা ও বিষয়বস্তু এতটাই দুর্বোধ্য ছিল যে, খোদ ভর্তি পরীক্ষার প্রধানকে ‘বিশৃঙ্খলা’র দায়ে ও তীব্র সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

১৯৯৩ সালে এই পরীক্ষা চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২ জন সুনেং পরীক্ষার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে মাত্র ৪ জন তাদের তিন বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছেন। বেশির ভাগই প্রশ্নপত্রে ভুলের দায় নিয়ে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে প্রশ্ন 'অতিরিক্ত কঠিন' হওয়ার দায়ে পদত্যাগের ঘটনা এটাই প্রথম।

দেশটির শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির হওয়ার জন্য অপরিহার্য এ পরীক্ষা দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন, সেটা নির্ধারণ ছাড়াও ভবিষ্যতের চাকরি, আয়-রোজগার, এমনকি ভালো জীবনসঙ্গী পাওয়ার বিষয়টিও অনেকাংশে নির্ভর করে এই পরীক্ষার ফলের ওপর।

জানা গেছে, প্রতিবারই এই পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হলেও, এবারের মতো কঠিন ও ‘বিশৃঙ্খল’ হয়নি। বিশেষ করে ইংরেজি প্রশ্নপত্র নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। গত বছর যেখানে ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়েছিলেন, এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ শতাংশে।

নিজের ভুল স্বীকার করে এবারের ভর্তি পরীক্ষার প্রধান ওহ সেউং-কিওল বলেন, প্রশ্ন কঠিন হওয়া নিয়ে হওয়া সমালোচনা মেনে নিচ্ছি। কয়েক দফা যাচাই-বাছাইয়ের পরও প্রশ্নপত্রটি মানসম্মত হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মাত্র ৭০ মিনিটে ৪৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রশ্ন ছিল খুবই জটিল। সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের আইনের দর্শন ও ভিডিও গেমের পরিভাষা (জার্গন) সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো।

বিশেষ করে, ভিডিও গেম নিয়ে তিন নম্বরের একটি প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের ঘাম ঝরিয়ে দিয়েছে। সেখানে একটি জটিল অনুচ্ছেদের মধ্যে সঠিক জায়গায় একটি বাক্য বসাতে বলা হয়েছিল। বাক্যটি ছিল ভিডিও গেমের ‘অবতার’ এবং ‘ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতা’ নিয়ে। প্রশ্নটি এমনভাবে করা হয়েছিল যে, অনেক শিক্ষার্থী কিছুই বুঝতে পারেননি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিট এ একজন লিখেছেন, প্রশ্নকারী নিজের পাণ্ডিত্য দেখাতেই এমনটি করেছেন। আরেকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজেভাবে লেখা এই প্রশ্নের মূল কথায় বোঝা যায়নি।

আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, প্রশ্নগুলো বুঝতে বুঝতেই আমার অনেক সময় চলে গেছে। অনুচ্ছেদগুলো অনেক প্যাঁচালো ছিল। উত্তরগুলোও দেখতে প্রায় একই রকম মনে হচ্ছিল। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি দ্বিধায় ছিলাম।

প্রশ্নপত্র নিয়ে শিক্ষাবিদদের মধ্যেও মতভেদ দেখা দিয়েছে। ইনচিওন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জং চে-কোয়ানের মতে, প্রশ্নগুলো কঠিনের চেয়ে বেশি ‘বিভ্রান্তিকর’ ছিল।

তিনি বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যের সঙ্গে যায় না। এতে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষা শেখার বদলে পরীক্ষায় পাস করার শর্টকাট কৌশল বা তোতাপাখির মতো মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় পুরো অনুচ্ছেদ না পড়েই শুধু কৌশল খাটিয়ে উত্তর দেওয়া হয়।

সমালোচকরা বলছেন, বিভিন্ন বই থেকে প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়ায় অর্থ বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। যেমন ভিডিও গেমের প্রশ্নটি স্টিভ সুইংকের ‘গেম ফিল’ নামের একটি বই থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছিল।

তবে হানকুক ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজের অধ্যাপক কিম সু-ইওন মনে করেন, এমন প্রশ্ন জরুরি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা যে ধরনের জটিল পড়াশোনার মুখোমুখি হবে, তা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্যই এমন প্রশ্ন করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ