ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির মাথায় রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গুলির ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় তাকে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন এক গণমাধ্যমকর্মী।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার গণমাধ্যমকর্মী হলেন ‘চ্যানেল ওয়ান’-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রিফাত রিসান। তিনি ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী রিফাত রিসান জাগো নিউজকে জানান, ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহের জন্য যান। এ সময় জরুরি বিভাগের সামনে কয়েকজন ব্যক্তি তাকে ভিডিও করতে বাধা দেন। বাধার কারণ জানতে চাইলে তারা তার ওপর হামলা চালায় এবং মারধর করে। পরে সেখানে উপস্থিত আরেক গণমাধ্যমকর্মীর সহায়তায় তিনি ঘটনাস্থল থেকে প্রাণে রক্ষা পান।
রিফাত রিশান তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিস্তারিত লিখে ফেসবুক পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, বোনাস লাইফ পেলাম বোধহয় আজ!’
‘আজকে দুপুরে লাঞ্চের উদ্দেশ্যে হাঁটতে হাঁটতে চানখারপুলের দিকে যাওয়ার পথে ঢাকা মেডিকেলের গেট ক্রস করার সময় দেখলাম ফেসবুকে লাইভে গিয়ে এক লোক চিৎকার করে বলছিল, ‘‘আমাদের ওসমান হাদি ভাইকে গুলি করেছে’’। এই কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে ঘটনা যাচাই করতে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকি। ভেতরে গিয়ে অনেককে কান্নাকাটি ও অনেকের শরীরে রক্তের দাগ দেখতে পেয়ে আমার অফিসকে ঘটনা সম্পর্কে জানানোর জন্য ফোন বের করে ভিডিও নিতে শুরু করি।’
ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘ফুটেজ নেওয়া অবস্থায় আচমকা কয়েকজন এসে কোনো কথা ছাড়াই আমাকে ধাক্কা দিতে দিতে ‘আমি হাদিকে গুলি করেছি’ এ রকম একটা কথা ছড়িয়ে দেয়। তাৎক্ষণিক মব তৈরি করে সেখানে। এরপর চারদিক থেকে শুরু হয় আমাকে কিল-ঘুসি, খামচি দেওয়া। আমার পরিহিত পাঞ্জাবি টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়।’
‘অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে দ্রুত বের হতে চাইলে হামলাকারীরা দৌড়ে আমাকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে রাস্তায় ফেলে লাথি মারতে থাকে। আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগই দেয় না। ইমার্জেন্সির বাইরে তখন লাইভের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্টার নিউজের ঢাবি প্রতিনিধি লিটন ভাই। দূর থেকে আমাকে চিনতে পেরে দ্রুত বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। তখনও হামলাকারীরা আমাকে ছাড়েনি। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজেও কিল-ঘুষির শিকার হন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘মারধরের ফলে প্রায় অচেতন হয়ে পড়ি একটা সময়। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ, আনসার কেউ তখনো সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। ২ মিনিট পর অচেতন কাটলে তখনও দেখি হামলাকারীদের দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে লিটন ভাই। তখনই আমি উঠে সেই স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করি।’
‘মেইন গেটের পথ যেহেতু হামলাকারীরা ঘিরে রেখেছিল, তাই খুঁজছিলাম ভিন্ন কোনো গেট দিয়ে বের হতে পারি কি না। এক আনসার সদস্যকে বলি ভাই আমাকে একটু এখান থেকে বের করে দিন। জবাবে সে বলে, আপনাকে সাহায্য করে আমি নিজে বিপদে পড়বো নাকি? যেমনে পারেন বের হন। এরপর কোনোমতে সেখান থেকে বের হয়ে দ্রুত একটা রিকশা নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরি। পরে মেডিকেল থেকে ড্রেসিং করিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। চোখের নিচ, গলা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় খামচির বড়ো বড়ো আচড় দৃশ্যমান। এছাড়াও ঘুষির ফলে মাথা অনেকটা ফুলে গেছে। সারা শরীরে ব্যথা আছে, জ্বর এসেছে।’
‘আজকে মরতে নিছিলাম। কারণ: ওসমান হাদির সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভিডিও নিচ্ছিলাম আমি। সম্পূর্ণ ঘটনা ঘটলো পুলিশ-আনসারের সামনে, অথচ তারা ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এই যদি হয় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থা। আগামী নির্বাচনে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করবে এই বাহিনী?’
তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ভাই শরীফ ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। একইসাথে তার যেসব কর্মী-সমর্থক আজ মব করে আমাকে হত্যাচেষ্টা করলো, সিসিটিভি ফুটেজ বের করে তাদের প্রত্যেকের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সেইসাথে নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকা পুলিশ-আনসারকেও যেন এই ঘটনার জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয় সেই দাবি জানাই।’
এফএআর/এমআরএম/এমএস